Home » জেলার ইতিহাস » মকর সংক্রান্তিতে বক্রেশ্বরে গরম জলে পুণ্যস্নান

মকর সংক্রান্তিতে বক্রেশ্বরে গরম জলে পুণ্যস্নান

বক্রেশ্বর ধাম
=========
বীরভূম জেলা অতি প্রাচীন কাল থেকে মহাযোগীদের সাধন স্থল হিসেবে অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। বীরভূমের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও ছড়িয়ে আছে প্রাচীন কালের অতি উচ্চকোটি মহাপুরুষদের সাধনপীঠ যা আজও জাগ্রত ও আধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিপূর্ণ। এই সব মহাঋষিদের মধ্যে আছেন অষ্টাবক্র ঋষি, দুর্বাসা ঋষি, মেধস ঋষি, সন্দিপন মুনি, বিভান্ডক ঋষি, মহাঋষি ভরদ্বাজ, ঋষি বৃহদারণ্যক, ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি, গর্গ মুনি, মান্ডব্য মুনি, মহাযোগী দত্তাত্রেয়-র মতো মহাযোগী, ঋষি ও মুনিরা।
বক্রেশ্বর ধাম মহাসিদ্ধপিঠটি হলো পশ্চিম বঙ্গের বীরভূম জেলার অন্তর্গত ছোট একটি গ্রাম ‘বক্রেশ্বর’ নামে যা পরিচিত। এই গ্রামটি ছোট হলেও এর স্থান মাহাত্ম বা আধ্যাত্মিক মাহাত্ম অপরিসীম। প্রায় সত্য যুগের সময় থেকে বিভিন্ন শাস্ত্র গ্রন্থে এই স্থানটির পরিচয় পাওয়া। এত প্রাচীন তীর্থ স্থান ভারতের আর কোথাও আছে বলে জানা নেই। মহামুনি অষ্টাবক্র ঋষির নাম অনুসারে এই জায়গার নাম হয় বক্রেশ্বর পীঠ বা বক্রেশ্বর ধাম। এই মহাঋষি নিজের শরীরের রোগ-কে সারাবার জন্য এই স্থানের ‘ব্রহ্মকুণ্ডে’ তপস্যা করে মহাদেবের আশীর্বাদে রোগ মুক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তী কালে মহাদেব, নারায়ণ, নারদ, দত্তাত্রেয় ঋষি, সপ্তর্ষি, সন্দিপন মুনি (কৃষ্ণের গুরু), দুর্বাসা ঋষি, মেধস ঋষি, নিত্যানন্দ মহাপ্রভু, সাধক বামাখ্যাপা, রামনাথ অঘোরী সহ বহু সাধক এখানে সাধন করে মহাসিদ্ধি লাভ করেছেন। এখনও বহু সাধক এখানে সাধনরত অবস্থায় আছেন। বক্রেশ্বর শতাব্দী প্রাচীন শিব-ধাম। একান্নপীঠের একপীঠ হলেও পর্যটকদের এখানে আসার মূল আকর্ষণ অবশ্যই উষ্ণ প্রস্রবণ।
এই বক্রেশ্বর ধাম একটি সতীপীঠও বটে, দেবী মা মহিষমর্দিনী।

অষ্টাবক্র
======
উদ্দালক-কন্যা সুজাতা ও উদ্দালক-শিষ্য কহোড়ের পুত্র। অষ্টাবক্র মাতৃগর্ভেই বেদজ্ঞান লাভ করেছিলেন। একদিন বেদপাঠরত কহোড়কে তিনি মাতৃগর্ভ থেকেই বলেন যে, কহোড়ের বেদপাঠ ঠিক হচ্ছে না। মহর্ষি কহোড় তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে গর্ভস্থ পুত্রকে শাপ দিলেন যে, তার দেহ অষ্টস্থানে বক্র হবে। অষ্টাবক্র তখনও ভুমিষ্ট হন নি ওঁর পিতা অর্থোপার্জনের আশায় জনক রাজার কাছে যান। সেখানে বন্দী নামে এক পণ্ডিত থাকতেন,যাঁর সঙ্গে তর্কে পরাস্ত হলে রাজ আজ্ঞায় পরাজিতদের জলে ডুবিয়ে দেওয়া হত। কহোড় তর্কে বন্দীর কাছে পরাস্ত হওয়ায় তাঁরও সেই গতি হল। অষ্টাবক্র শিশু অবস্থায় জানতেন না যে, তাঁর পিতার মৃত্যু হয়েছে – তিনি উদ্দালককেই পিতা বলে জানতেন।
বালক বয়সে তিনি যখন মাতা সুজাতার কাছে পিতার মৃত্যুর কারণ জানতে পারলেন,তখন তিনি মাতুল শ্বেতকেতুকে নিয়ে জনক রাজার কাছে গেলেন। সেখানে বন্দীকে তর্কে পরাস্ত করে তিনি বললেন যে, বন্দী যেরকম পরাজিত ব্রাহ্মণদের জলে ডুবিয়েছিলেন,এবার সেই ভাবে বন্দীকে জলে ডোবানো হোক। বন্দী তখন নিজেকে বরুণের পুত্র বলে পরিচয় দিয়ে বললেন যে, তিনি ব্রাহ্মণদের জলের মধ্যে পিতা বরুণের যজ্ঞ দেখতে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা এখন সবাই ফিরে আসবেন। তবে উনি অষ্টাবক্রের সন্মানে জলের মধ্যে অন্তর্ধান করে পিতার সঙ্গে মিলিত হবেন। কহোড় ও অন্যান্য ব্রাহ্মণরা ফিরে এলে বন্দী সমুদ্রে প্রবেশ করলেন। কহোড় পুত্র গর্বে পরম প্রীত হয়ে অষ্টাবক্রকে একটি নদীতে প্রবেশ করতে বললেন। সেই নদী থেকে উঠতেই অষ্টাবক্রের দেহ আর বক্র রইলো না।
বদান্য ঋষির কন্যাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে অষ্টাবক্র তাঁকে বিবাহ করতে চাইলে, বদান্য অষ্টাবক্রকে বললেন যে, উত্তর দিকে যাত্রা করে কুবের-ভবন অতিক্রম করে এক রমণীয় বনে পৌঁছে – সেখানে এক তপস্বিনীর সঙ্গে দেখা করে ফিরে এলে তারপর উনি ওঁর কন্যাকে দান করবেন। অষ্টাবক্র বহু পথ অতিক্রম করে সেই বনে পৌঁছে এক দিব্য আশ্রমের কাঞ্চনময় ভবনে প্রবেশ করলেন। সেই ভবনে কয়েকটি সুন্দরী নারীর সঙ্গে এক বৃদ্ধা রমণী ছিলেন। সেইখানে থাকাকালীন সেই বৃদ্ধা অষ্টাবক্রের শয্যায় এসে ওঁর সঙ্গে মিলিত হবার চেষ্টা করতেন। অষ্টাবক্রকে লোভ দেখাতেন যে, ওঁর কামনা পূর্ণ করলে ওঁর রমণীয় আশ্রম সমেত সব ধন অষ্টাবক্রের হবে। অষ্টাবক্রের কাছে প্রত্যাখ্যিত হবার পর এক রাত্রে তিনি পরম রূপবতী কন্যায় রূপান্তরিত হয়ে অষ্টাবক্রকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু অষ্টাবক্র প্রলোভিত হলেন না। তখন সেই বৃদ্ধা নিজেকে উত্তরদিকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলে পরিচয় দিয়ে বললেন যে, তিনি বদান্যের অনুরোধে অষ্টাবক্রকে পরীক্ষা করছিলেন। আরও বললেন যে, অষ্টাবক্র যেন মনে রাখেন যে, স্ত্রী জাতি চপলা এবং স্থবিরা স্ত্রীরও কামজ্বর হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অষ্টাবক্র ফিরে এসে বদান্য-কন্যা সুপ্রভাকে বিবাহ করেন।
রাজর্ষি জনক অষ্টবক্র মুনির কাছে জ্ঞান, মুক্তি ও বৈরাগ্য লাভের উপায় জানতে চেয়েছিলেন। তাঁর জিজ্ঞাসার উত্তরে অষ্টবক্র মুনি যা বলেছেন তা পরবর্তীতে অষ্টাবক্র গীতা নামে বিশটি অধ্যায়ে সংকলিত হয়েছে। এতে অদ্বৈতবাদ ও সমদর্শন বিষয়ে গভীর আলোচনা করা হয়েছে।
রাজা আগা খানের ,মন্ত্রী সভার মন্ত্রী দর্পনারায়ন ১৭৬৪ সালে এই মন্দিরের “শেষ সংস্কার “করেছিলেন ইতিহাসে এটায় পাওয়া যায় ৷ কবে তৈরী হয়েছো তা সঠিক জানানি।
ভিডিও – সুমন্ত চৌধুরী

-বিজ্ঞাপন-
[uam_ad id=”3726″]

Comments