Home » জেলার খবর » রাস্তার দাবিতে ডেপুটেশন বালতা গ্রামের বাসিন্দাদের

রাস্তার দাবিতে ডেপুটেশন বালতা গ্রামের বাসিন্দাদের

দিন কয়েক আগেই প্রসব যন্ত্রনায় কাতর হয়েছিলেন পাপিয়া বীরবংশী। গ্রামের মানুষজন কোনোমতে তাকে ট্রলিতে চাপিয়ে চার কিলোমিটার পথ পার করে তবেই তাকে চাপাতে পেরেছিল অ্যাম্বুলেন্স-এ। গ্রামেরই এম এ পাশ করা মেয়ে সুতপা অধিকারী সিউড়িতে একটি কম্পিউটার সেন্টারে কাজ করেন। গ্রাম থেকে চার কিলোমিটার দূরে এসে তাকে বাস ধরতে হয়। সেই চার কিলোমিটার পথ পেরোতে নাভিশ্বাস উঠে প্রায় দিন বাস মিস করেন এই যুবতি। আবার মোটরবাইক নিয়ে যাবার সময় রাস্তার কাঁদায় পিছলে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন। বহু দরবার করেও তাঁদের মতো রাস্তা হয়নি। তাই সোমবার সিউড়িতে জেলা শাসকের কাছে এসে দরবার করলেন তাঁদের বেহাল রাস্তার মেরামতের জন্য।
বীরভূমের পাঁড়ুই থানার অন্তর্গত বালতা-করচাডি গ্রামের বাসিন্দাদের রাস্তার বেহাল দশার খেসারতের এই গুলোই টুকরো টুকরো কোলাজ। আবদার, আবেদন করে, গলা ফাঁটিয়ে, ক্ষোভ উগড়ে কাজ হয় নি কোনোই। বাতিকার-সাহাপুর ভায়া বালতা-এই ছয় কিলোমিটার রাস্তার কি দূরাবস্থা বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না বিন্দুমাত্র। অথচ এলাকার প্রায় তিন-চারশো পরিবারের একমাত্র ভরসা এই রাস্তা। কিন্তু বছরের পর বছর সেই রাস্তা নিয়ে কারো কোনো হেলদোল না থাকায় অগত্যা রাস্তা পাকা করার দাবীতে গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই হাজির হলেন সিউড়িতে জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে। সোমবার দুপুরের পাড়ুই থানার ওই গ্রামের মানুষজন সিউড়িতে এসে মিছিল করলেন, জেলাশাসকের দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন। বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রজীবন বাগদি, কালিচরন রায়রা। তাদের কথায়, ‘‘এখনও রাস্তায় এক হাঁটু কাঁদা।স্কুল যেতে খুব কষ্ট হয়।’’ বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন গ্রামের মেয়ে বউরাও। তাদের কথায়, ‘গিয়ে দেখে আসুন কাপড় হাঁটুর উপরে তুলে রাস্তায় চলতে হয় খটখট দিনেও।’’ গ্রামের যুবক মদন হাজরার কথায়, ‘‘সদর শহর সিউড়ি আসার জন্য ১৮ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে পেরোতে হয় ৩৫ কিলোমিটার। গ্রামের ছেলেমেয়েরা সাইকলে করে প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত করে। প্রায় দিন কেউ না কেউ পিছলে পড়ে যায়।’’ গ্রামের আশাকর্মী ললিতা মাহান্ত বলেন, ‘‘কোনো গাড়ি গ্রামে যেত চায় না। সেই চার কিলোমিটার দূরে বাতিকারে শেষ গাড়ি আসে।’’ গ্রামে গিয়েও দেখা গেল গ্রামবাসীদের অভিযোগের সাথে কোনো ফারাক নেই বাস্তব চিত্রে। কোথাও প্যাচপ্যাচে কাঁদা ছয়-সাত ইঞ্চি গভীর তো কোথাও জলে টইটুম্বুর। গ্রামের কারো চটি পরার জো নেই। পায়ে নয় চটি থাকে হাতে। রাস্তাটি গ্রামের অসংখ্য মানুষের কাছে এতটাই গুরুত্বপূ্র্ন যে ওই রাস্তার জন্য গোটা গ্রামকেই উঠে আসতে হয়েছে সিউড়িতে। এদিন জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তবে গ্রামবাসীদের সাথে সহমত হতে পারেন নি বাতিকার পঞ্চায়েতের প্রধান নারায়ন দাস। তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তায় সব গাড়িই তো পেরোয়। রাস্তাতে যাতায়াতে কোনো অসুবিধা নেই। গ্রামবাসীরা কেন সিউড়িতে গিয়েছে রাস্তার দাবী নিয়ে বলতে পারব না।’’
ছবি ও তথ্যঃ মায়া সালুই
[uam_ad id=”3726″]

Comments