Home » জেলার খবর » শুধুই কান্না, দৌলতাবাদ বাস দুর্ঘটনা

শুধুই কান্না, দৌলতাবাদ বাস দুর্ঘটনা

ঘুমের ঘোরেই অধিকাংশ যাত্রী ঢলে পড়েছেন শেষ ঘুমে। বিকট শব্দ। তারপর শুধু শেষের শুরু। দৌলতাবাদে বাস দুর্ঘটনায় ঘটেছে এই মর্মান্তিক পরিণতি। যাঁরা জেগেছিলেন, তাঁরা শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জানলা বন্ধ থাকায়, বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তাঁরা। কার্যত দমবন্ধ হয়েই মৃত্যু হয় প্রায় সকলের। সারাদিন ছিল লক্ষ মানুষের ভিড়। সন্ধ্যায় দেহ উদ্ধার শুরু হতেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য। নদীর দুধারে পরিজনদের ভিড়। বুক ফাটা কান্নার আওয়াজ ছাপিয়ে যাচ্ছে দুকুল। মর্মান্তিক এই দৃশ্য শেষ কবে দেখেছেন মুর্শিদাবাদের মানুষ, তা স্মৃতি হাতড়েও মনে করতে পারছেন না অনেকে।
১১ ঘণ্টা জলে ডুবে থাকার পর বাসের ভিতর আটকে থাকা যাত্রীদের বেঁচে থাকার আশা যে নেই, তা সকলেই জানতেন। অপেক্ষা ছিল সকলের দেহ পাওয়া যাবে তো! ভৈরবের জল থেকে বাসটিকে চারটি লোহার ক্রেন দিয়ে কিছুটা অংশ তোলার পর উদ্ধারকারীরাই চমকে উঠলেন। বাসের সামনের অংশ দুমড়ে মুছড়ে গিয়েছে। কাঁচের জানলা বন্ধ। চালকের আসনের পাশের সিটেই প্রথম দেহটি চোখে পড়ে। প্রথমে তাঁর বা হাতের কনুই দেখতে পাওয়া যায়। দেখা যায়, মেরুন রঙের জামা পড়া এক ব্যক্তি মুখ থুবড়ে বাসের লোহার রডের ওপর পড়ে রয়েছেন। তাঁর দেহ উদ্ধারের জন্য ডুবুরি নামানো হয়। কিন্তু বাসটি দুমড়ে যাওয়ায়, তাঁর দেহ আটকে যায় বাসের রডে।
ঠিক হয় বাস তুলে এনে কাটার দিয়ে বাস কেটে দেহ উদ্ধার করা হবে। দেখা যায়, জলভর্তি বাসের মধ্যে অনেক দেহই ভেসে রয়েছে। বোঝা যায়, ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তাঁরা। কারোর পা, কারোর হাত দেখতে পাওয়া যায়। দেহে রক্তের চিহ্ন নেই বটে, তবে দীর্ঘক্ষণ জলে ডুবে থাকায় দেহ ফুলে গিয়েছে। শেষ খবর অনুযায়ী ৪১ টি দেহ বের করে আনা হয়েছে। কয়েকটি মহিলার দেহ রয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ এনডিআরএফ জানিয়ে দেয় বাসে আর দেহ নেই। তবে বাসের জানলা দিয়ে কিছু দেহ নদীর গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সন্ধ্যা নামলেও সার্চ লাইট লাগিয়ে উদ্ধারকাজ চলে। গতকাল পর্যাপ্ত আলোর অভাবে উদ্ধার বন্ধ থাকার পর আজ আবারও উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে।
এদিকে বীরভূমের দুই বাসিন্দা, মা ও ছেলে দুজনেই এই দুর্ঘটনায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দুজনেই শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। উনাদের নাম সুব্রত মিত্র ও মিনতি মিত্র। সুবত মিত্র ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মা মিনতি মিত্র ছিলেন কুরুকগ্রাম স্কুলে কর্মরত।
ভিডিও প্রসেনজিৎ মালাকার

সুব্রত মিত্র।

মিনতি মিত্র

ছবি জয়ন্ত পাল

-বিজ্ঞাপন-
[uam_ad id=”3726″]

Comments