Home » জেলার খবর » আবারও বৃষ্টিতে নাজেহাল জেলা

আবারও বৃষ্টিতে নাজেহাল জেলা

গতপরশু বৃষ্টির রেশ কিছু কম থাকায় সবাই ভেবেছিল এযাত্রায় বোধহয় বীরভূম বেচে যাবে বন্যার হাত থেকে। কেবল মাত্র বান ভাসি লাভপুরের জল ছবি বাদ দিলে বীরভূমের বাকি এলাকায় আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু গতপরশু ঠিক রাত থেকে যেভাবে মুশল ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে করে আগামী একদিন যদি এই ভাবেই বৃষ্টিপাত চলে এবং প্রতিবেশি খাড়খন্ড রাজ্যের ছবিটাও যদি একই থাকে। তাহলে বীরভূমকে রক্ষা করা হয় তো ভগবান ছাড়া আর কারো সাধ্য থাকবে না। ২০০০ সালের ভয়াবহ বন্যার চেহারা নিতে পাড়ে ফের বীরভূম জেলা। শুধু কেবল মাত্র সিউড়ি তীলপাড়া ব্যারেজ এবং ময়ূরাক্ষ্মী নদী এখনও পর্যন্ত বাচিয়ে রেখেছে বীরভূম জেলাকে। যদিও মঙ্গলবার যেভাবে বৃষ্টি লাগাতার পড়ে চলছে তাতে ইতিমধ্যেই জেলার বেশ কিছু গ্রাম শহর ইতিমধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মানুষের এখন শুধু যাতায়াতের উপায় নৌকা বা কড়াই।
মঙ্গলবার বীরভূমের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল বন্যার জল ছবি। এদিন সকালে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত থেকে বৃষ্টির জেরে জেলার প্রায় প্রতিটি নদীতে জলের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। প্রায় বিপদ সীমার কাছাকাছি বয়ে চলছে বেশির ভাগ নদী। তবে বীরভূমে বন্যা থামানোর একটাই উপায় রয়েছে। যা প্রশাসনের হাতে নেই। প্রতিবেশি ঝাড়খন্ড রাজ্যের বৃষ্টির পরিমাণের ওপর নির্ভর করছে বীরভূমের বন্যা। গতকাল বীরভূমে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তার থেকে অনেক খানি কম বৃষ্টি হয়েছে ঝাড়খন্ড রাজ্যে। তাই ঝাড়খন্ড থেকে আসা জলের পরিমাণ কিছুটা কম রয়েছে। ঝাড়খন্ড থেকে জল এলে জেলার ম্যাসাঞ্জোর ব্যারেজ দিয়ে সেই জল বীরভূমে ঢোকে। আর এই ম্যাসাঞ্জোর ব্যারেজে জল ধারন ক্ষমতা রয়েছে ৫ লক্ষ কিউসেক জল। যেখানে মঙ্গলবার সকালে জলের পরিমাণ ছিল আড়াই লক্ষ কিউসেকের কিছু বেশি। তাই ম্যাসাঞ্জোর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু এদিন জেলা জুড়ে বৃষ্টির জেরে জেলার ভেতরে বেশ কিছু নদীর জলের পরিমাণ বাড়ায় জল ছেড়তে হয়েছে প্রশাসনকে। এদিকে ম্যাসাঞ্জোর থেকে জলের পরিমাণ বেশি হলেই সেই জল ছাড়া হবে যা এসে পৌছাবে বীরভূমের রক্ষা কবজ তিলপাড়া জলাধারে। সেই জলাধারে এদিন সকাল অবধি জল স্তর ছিল ২০৩ দাগে। এই দাগ ২০৬ হলেই তা বিপদ সীমা ছুঁয়ে যাবে। সেই সময় জল ছাড়তে বাধ্য হবে বীরভূম প্রশাসন। তবে যদি জল ছাড়তে বাধ্য হয় প্রশাসন তাহলে বীরভূমের একাধিক শাখা নদী যেমন দ্বারকা, ব্রাহ্মণী, হিংলো, বক্রেশ্বর, কোপাই, কুয়ে প্রভৃতি নদী গুলি ভেসে যাবে জলের তোরে। শুধু তাই নয় এই জলের জেরে প্রতিবেশি মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমায় ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ইতিমধ্যেই তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য ৯৩৪ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যে জল ধাপে ধাপে হিংলো থেকে ২০০০, ব্রাহ্মণী থেকে ১৬২৪, দ্বারকা থেকে ৯৭৪, বক্রেশ্বর থেকে ৩৬৯ এবং কোপাই থেকে ২০৮৮ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এর জেরে জেলার সদর শহর সিউড়ি থেকে মহম্মদ বাজার সহ ১২ গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই সব এলাকা থেকে মানুষ নৌকায় করে পড়াপাড় করছেন।
অন্যদিকে বীরভূমের লাভপুরের চিত্রটা গতকালকের থেকে আজ আরো ভয়ানক আকার ধারন করেছে। ইতিমধ্যেই লাভপুরের যেসব এলাকা গুলিতে জল ঢুকেছিল সেই সব এলাকায় জলস্তর নামতে শুরু করেছিল। কিন্তু এইনের বৃষ্টির জেরে আবার করে সেই সব এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। বহু গ্রাম ইতিমধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন অবস্থায় রয়েছে। প্রশাসনের তরফে এই সব বন্যা কবলিত এলাকা গুলিতে ত্রান পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বন্যা কবলিত এলাকা গুলিতে ঘুরে মানুষের খবর নিচ্ছেন বীরভূমের জেলা শাসক ও অন্যান্য আধিকারিকরা। জেলা শাসক জানিয়েছেন, “বৃষ্টি বন্ধ না হওয়া অবধি কোথায় কি হবে বলা মুশকিল। আমরা সব দিকেই নজর রেখেছি। ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রল রুম করা হয়েছে।”
তথ্যঃ কৌশিক সালুই
[uam_ad id=”3726″]

Comments