Home » জেলার খবর » আদিবাসী দম্পতিদের গণবিবাহ মল্লারপুরে

আদিবাসী দম্পতিদের গণবিবাহ মল্লারপুরে

রামপুরহাট: রবিবার ২১জোড়া আদিবাসী দম্পতির গণবিবাহ দিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দিল পূর্বাঞ্চল কল্যাণ আশ্রমের মল্লারপুর শাখা। এদের অনেকেই গ্রাম্য মেলায় ‘মনামুনি’ বা পছন্দ করে করে প্রায় দশ-পনেরো বছর আগে সংসার শুরু করেছিল। আর্থিক অভাবে বিবাহের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করতে পারেননি তাঁরা। সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলায়নি। বর্তমানে তাঁরা সকলেই সন্তানের বাবা-মা। কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতি এখনও মেলেনি তাঁদের। ফলে সমাজ থেকে ব্রাত্য ছিলেন তাঁরা। এদিন অভিনব এই বিয়ে দেখতে বহু মানুষের সমাগম ঘটে আশ্রমে। 
এদিন আশ্রম এলাকায় বিশাল প্যান্ডেল করা হয়। পর পর বর কনে সাজে বসানো হয় ২১জোড়া আদিবাসী দম্পতিকে। অন্যদিকে চলে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য রান্না। বাজে সানাই, চলে আদিবাসী মহিলাদের নৃত্য। সেখানেই আদিবাসী সমাজের রীতি অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বাসনপত্র, শাড়ি সহ বিভিন্ন দানসামগ্রীও দেওয়া হয়। আগত অতিথিরা দম্পতিদের পুষ্পস্তবক দিয়ে মঙ্গল কামনা করেন। কথা হচ্ছিল বীরভূম সীমান্তে ঝাড়খণ্ডের শিকারীপাড়া থানার কেমন মার্ডির সঙ্গে। তিনি জানান, বছর পনেরো আগে গ্রাম্য মেলায় রামপুরহাট থানার তেঁতুলপাড়ার মাইনো টুডুকে মনামুনি করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সংসার শুরু করেন। বর্তমানে তাঁদের তিন ছেলে। একইভাবে ১১বছর আগে মনামুনি মেলায় রামপুরহাট থানার কুরুডিহি গ্রামের চিন্তামনি টুডুকে বিয়ে করেন ঠাকুরপুরা গ্রামের অধরা টুডু। তাঁদেরও তিন সন্তান রয়েছে। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির ক্ষুদিরাম মার্ডি বছর আটেক আগে বিয়ে করে গ্রামের ববিতা মার্ডিকে। এরকমই নন্দলাল সোরেন, রীনা হাঁসদা, বাহাদুর মুর্মু, কাজলী মার্ডিদের ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার। কিন্তু আদিবাসী সমাজ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে কোনও মন্দিরে যেমন তাদের প্রবেশাধিকার ছিল না, তেমনি কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারতেন না তাঁরা। এবার সব বাধা উঠে যাবে বলে খুশি তাঁরা।
আশ্রমের মল্লারপুর শাখার সভাপতি স্বপনকুমার রক্ষিত বলেন, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের মোট ২১জোড়া দম্পতির বিয়ে দিয়ে সামাজিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া হল। তিনি বলেন, এদের প্রত্যেকেই মনামুনি করে ঘর সংসার পেতেছিলেন। বর্তমানে অনেকেরই সন্তান রয়েছে। আর্থিক অনটনের জন্য আনুষ্ঠানিক বিয়ে করতে পারেননি। সামাজিক স্বীকৃতি না থাকায় আদিবাসী সমাজের কোনও শুভ অনুষ্ঠান বা মন্দিরে প্রবেশ থেকে বঞ্চিত ছিলেন তাঁরা। এই বঞ্চনা থেকেই মুক্তি দিতে তাঁদের জাঁকজমকভাবে বিয়ে দেওয়া হল। আশ্রমের কর্মকর্তারা বলেন, আগামীদিনে এইভাবেই বিয়ে দিয়ে ১০১জোড়া বনবাসীকে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তথ্যঃ বর্তমান পত্রিকা
[uam_ad id=”3726″]

Comments