Home » জেলার খবর » হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর মৃতদেহ উদ্ধার

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর মৃতদেহ উদ্ধার

বীরভূম ৩১ জুলাইঃ- হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ক্যান্সার আক্রান্ত এক রোগীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার এক নির্মিয়মান বাড়ির বাইরে থেকে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বীরভূমের সিউড়ির সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। হাসপাতালের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে কিভাবে রোগী এক কিমি দূর গিয়ে আত্মঘাতী হলো সেই গাফিলতির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ রোগীর আত্মীয় ও পরিবারের। এদিকে নিরাপত্তার গাফিলতির কথা মেনে নিয়ে কমিটি করে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে মৃত গৃহবধু হলেন ফুলি বাদ্যকর(৩৫)। এদিন সকালে হাসপাতাল থেকে প্রায় এক কিমি দূরে বড়বাগানের লোকনাথ পল্লীর নির্মিয়মান বাড়ির বাইরে প্লাস্টার করার জন্য তৈরি করা বাঁশের কাঠামো থেকে ওই মহিলার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে সিউড়ি থানার পুলিশ ও দমকল বাহিনী। তার বাড়ি কুখুডিহি গ্রামে। ক্যান্সার আক্রান্ত ওই গৃহবধু গত শুক্রবার দুপুরে পেটের যন্ত্রণা নিয়ে সিউড়ি সুপার স্পেসালিটি হাসপাতালে আসেন ও ভর্তি হন। ডঃ সৌমেন্দু দত্তের অধীনে ষষ্ঠ তলে ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে তার চিকিৎসা চলছিল। সেই দিন থেকেই তার সঙ্গে ছিল না বালিকা দুই মেয়ে ছায়া ও মায়া। রবিবার রাত্রি ১১ টার সময় ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সদের নজরে আসে ফুলি বাদ্যকর বেডে নেই। তার পর খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সিউড়ি থানায় ঘটনার কথা জানায় রাত্রি ১২ টা নাগাদ। ইতিমধ্যেই সঙ্গে থাকা দুই মেয়েও বাড়িতে বাবাকে ফোন করে মায়ের নিখোঁজের কথা জানায়। ভোর বেলায় মৃতার স্বামী অচিন্ত আরো দুই নিকট আত্মীয়কে নিয়ে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়। তারাও খোঁজাখুঁজি করে বিফল হন। এদিকে সকাল হতেই লোকনাথ পল্লী থেকে পুলিশ ও দমকল মৃতদেহ উদ্ধার করে সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই মৃতদেহ যে ফুলি বাদ্যকরের তা সনাক্ত করে মৃতার পরিজনেরা। এর পরেই বিক্ষোভে তারা ফেটে পরেন। নিরাপত্তার গাফিলতির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। ঘটনাথলে সিউড়ি থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
সিউড়ি সুপার স্পেসালিটি হাস্পাতালে নিরাপত্তার দায়িত্ব এক বেসরকারী এজেন্সী সংস্থার। রবিবার রাত্রে হাসপাতালে ১২ জন নিরাপত্তা রক্ষী ছিলেন এর সঙ্গে ২৬ টি সিসি টিভি ক্যামেরা আছে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে। এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা পেরিয়ে ওই রোগীনি কিভাবে ষষ্ঠ তল থেকে নিচে গেট পেরিয়ে বাইরে গেলো সেই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ মৃতার পরিবারের। তাঁদের দাবি নিরাপত্তার গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটলো। মৃত মহিলার মেয়ে ছায়া বাদ্যকর জানায়, মায়ের পেটের ব্যাথা ছিল। রবিবার রাত্রে মাকে ইঞ্জেক্সেন দেওয়ার পর বরফ দিল। এর পর মায়ের ব্যাথা কমতে শুরু করলো। মা আমাদের দুই বোনকে ঘুমাতে বললো। ওই বেডেই মায়ের পাশে আমরা শুয়ে পরে ঘুমিয়ে পরি। হঠাৎ মায়ের নাম করে নার্স রা ডাকতে থাকে তাতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে দেখি মা বেডে নেই, সবাই মিলে খুঁজতে শুরু করি। না পেয়ে বাড়িতে বাবাকে জানায়। সকালে হাসপাতাল থেকেই জানতে পারলাম অনেক দূরে মায়ের গলায় দড়ি দেওয়া দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মা ঠিক মতো হাটতে পারতো না। বাথরুমে জেতেও কষ্ট হতো। সেখানে উপর থেকে নিচে নেমে কিভাবে অত দূরে গেলো। টার সনেগ তো প্রচুর নিরাপত্তা রক্ষী তাঁদের নজর বা কি করে এড়িয়ে গেলো। এটা তাঁদের গাফিলতিতে হয়েছে। হাসপাতালে রোগী কল্যান সমিতির চেয়ারম্যান ডঃ অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, নার্সিং সুপার, ওয়ার্ড মাস্টার এবং সহকারী সুপার কে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি করে ঘটনার তদন্ত করা হবে। সেই রিপোর্টে যাদের গাফিলতির কথা উঠে আসবে তাঁদের শাস্তি দেওয়া হবে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রী আড়ি বলেন, হাসপাতালের তদন্ত কমিটির সঙ্গে আমিও নিজে ঘটনার তদন্ত করবো। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাদের গাফিলতিতে রোগী বাইরে চলে গেলো।
ছবি ও তথ্যঃ মায়া সালুই
[uam_ad id=”3726″]

Comments