Home » জেলার খবর » হোটেলে রাত্রিযাপনে জোড়া লাগল ‘ভেঙে যাওয়া’ দাম্পত্য

হোটেলে রাত্রিযাপনে জোড়া লাগল ‘ভেঙে যাওয়া’ দাম্পত্য

সম্পর্কের সুতোটা ঢিলে ছিল, তা পুরোপুরি ছিঁড়ে যাওয়ার আগে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখার জন্য দম্পতিকে হোটেলে রাত্রিবাসের অভিনব নিদান দিয়েছিলেন বিচারক। একেবারে অক্ষরে অক্ষরে ফল।
বিচারকের সেই অভিনব নিদানে জুড়ে গেল ভাঙতে বসা সম্পর্ক। ভরা এজলাসেই বিচারকের সামনে তাঁর কথা মতই হাতে হাত ধরলেন সেই দম্পতি যারা কি না তিনদিন আগে এই এজলাসেই একের অপরের প্রতি স্বর চড়িয়ে ছিলেন সপ্তমে! তারাই এদিন শপথ নিলেন, এইভাবেই সারা জীবন একের অপরের হাত ধরে থাকার। এক নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী তখন এজলাস, কাঠগড়া। খোদ বিচারকও হয়ে পড়লেন আবেগাপ্লুত। দম্পতির উদ্দেশ্যে বললেন, ‘জীবন কখনও গোলাপ বিছানো থাকে না, থাকে কাঁটাময়। তারমধ্যে থেকে-ই আনন্দ খুঁজে নিতে হয়।’ শুনলেন দম্পতি। হাতে হাত রেখেই বের হলেন এজলাস থেকে। সিউড়ি আদালত চত্বরে ভীড় উপচে পড়ল দম্পতিকে ঘিরে। মিষ্টিমুখ করলেন সকলেই।  স্বামী গৌতম দাস বললেন, ‘আমি আশাবাদী বাকি জীবনটা সুখে শান্তিতেই কাটবে।’’ স্ত্রী অহনা দাসও খুশির ঝিলিকমাখা চোখে বললেন, ‘‘বিচারক আবার আমাদের এক করলেন। শুরু হল নতুন জীবন।’’

নদীয়ার তেহট্টের বাসিন্দা এই অহনা দাসের বিয়ে হয়েছিল সিউড়ির ভট্টাচার্যপাড়ার গৌতম দাসের সাথে। বিয়ের পরই তাদের সংসারে থাবা বসায় দাম্পত্য কলহ। দিন দিন সদ্য বিবাহিত যুগলের জীবন তিক্ততায় ভরে ওঠে। অশান্তি চরম মাত্রা নেয়। বাড়ি ছেড়ে ভাড়াবাড়িতে ভিন্ন হয়েও মেটে না সমস্যা। নানান তিক্ততা, ভূল বোঝাবুঝি, মনোমালিন্যে শেষ পর্যন্ত স্বামী, শ্বশুর ও ভাসুরের নামে বধূ নির্যাতন, প্রাণনাশের চেষ্টা, হূমকির মামলায় করে বসেন গৃহবধূ অহনা। সেই মামলায় আগাম জামিন নিতে গত মঙ্গলবার সিউড়ি আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন স্বামী গৌতম। জেলা ও দায়রা বিচারক পার্থসারথী সেনের এজলাসে ছিল জামিনের আবেদনের শুনানী। জামিনের বিরোধিতা করে পাল্টা আবেদন করেন স্ত্রী অহনাও। সব দেখে বিচারক ডেকে পাঠান বিবাদমান দম্পতিকে। এজলাসে উপস্থিত হয়ে সেখানেও ওই দম্পতি গলা চড়ান একের অপরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে। অল্প বয়সী দুই ছেলে-মেয়ের এহেন কান্ড দেখে শুনানী স্থগিত করে দেন বিচারক। তারপরেই দেন সেই বেনজির নিদান। বিচারক পরামর্শ দেন , দম্পতিকে সিউড়ির যেকোনো অভিজাত হোটেল তিনদিন একান্তে, নিভৃতে নিজেদের মত করে কাটানোর এবং তারজন্য যাবতীয় খরচের ভার নবেনে বিচারকই স্বয়ং। পাশাপাশি নির্দেশ দেন, এই তিনদিন বাইরের কেউ যেন তাদের বিরক্ত না করে। তিনদিন শেষে শুক্রবারই ছিল তাদের ফের আদালতে উপস্থিত হওয়ার দিন।

এদিন সকাল এগারোটার মধ্যে হোটেল থেকে সোজা আদালতে উপস্থিত হয়ে যান ওই দম্পতি। দু—একটি মামলার শুনানী করেই বিচারক নিজের সামনে ডেকে নেন দম্পতিকে। জিজ্ঞাসা করেন, ‘কেমন আছেন ?’ উত্তরে দুজনেই জানায়, ‘ভালো।’এরপরই বিচারক বলেন,‘দুজনে একে অপরের হাত ধরুন। প্রতিজ্ঞা করুন এভাবেই একে অপরের হাত ধরে থাকবেন সারা জীবন।’’ দম্পতি নেন সেই শপথ। বিচারক বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রী-র মধ্যে ঝগড়া হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। জীবনের উপলব্ধি দিয়ে সমস্যার বিচার করতে হবে এবং তার সমাধান করতে হবে। আপনাদের এই ঘটনা গোটা সমাজে বার্তা পৌছাবে।’’ বিচারক ডেকে নেন ওই দুই পরিবারের সদস্যদেরও। বলেন, ‘‘যা হয়েছে ভুলে যান। ওদের জীবন ওদের মত মরে কাটাতে দিন। ওদের ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করবে আপনাদের ভবিষ্যতও।’’ সকলেই বিচারক মত গ্রহন করে নেন। এরপরই  বিচারক  জামিন দিয়ে দেন অভিযুক্ত সকলকে।

এজলাস থেকে বেরিয়ে চলে মিষ্টিমুখের পালা। তারপর সকলে মিলে একসাথে রওনা দেন সিউড়ি ভট্টচার্য পাড়ার উদ্দেশ্যে। সেখানে গৌতমের বাড়ি আর অহনার শ্বশুরবাড়ি। সিউড়ি আদালতের সরকারি আইনজীবি রঞ্জিত গাঙ্গুলী এব্যাপারে বলেন,‘‘সব তীক্ততা ভূলে দুজনেই একে অপরের হাত ধরে শপথ নিয়েছে সারাজীবনে একসাথে কাটানোর। খুব ভালো লাগছে প্রায় ভাঙতে বসা অল্পবয়সী দুই দম্পতির সম্পর্ক জোড়া লাগাতে পেরে।’’
ভিডিও-শুভদীপ পাল
তথ্য- কৌশিক সালুই

-বিজ্ঞাপন-
[uam_ad id=”3726″]

Comments