Home » জেলার খবর » ফের অমানবিকতার নজির,এবার সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে

ফের অমানবিকতার নজির,এবার সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে

বীরভূম ১৪ জুলাইঃ- ফের অমানবিকতার নজির। এবার বীরভূমের সিউড়ির সরকারী বাসস্ট্যান্ডে কয়েক ঘন্টা এক দুর্ঘটনা গ্রস্থ বাস যাত্রীকে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠলো। সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে সিউড়ি থানার পুলিশ জখম ব্যাক্তিকে উদ্ধার করে সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
জখম ব্যাক্তি হলেন আনন্দ কোড়া। বাড়ি দুবরাজপুর থানার কুখুটিয়া গ্রামে। এদিন সকালে দূর্গাপুর থেকে চাঁচল গামী উত্তরবঙ্গ পরিবহন সংস্থার বাসের ছাদে ওঠেন তিনি দূররাজপুর থেকে। সাইথিয়া- অন্ডাল রেল রুটের সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লী এলাকায় রেলের আন্ডার পাশ পারাপারের সময় ব্রিজের নিচে পিষ্ট হয়ে যান ও তাতে ওই ব্যাক্তির কোমর ভেঙ্গে যায়। ওই সরকারী বাস স্ট্যান্ডে ঢোকার পর কর্মীরা তাকে বাসের ছাদ থেকে নামিয়ে টিকিট কাউন্টারের পাশের রেখে দেয় বলে অভিযোগ। এর পর সেই বাস ফের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ঘটনার ঘন্টা চারেক পর খবর পেয়ে সংবাদ কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যাক্তির অবস্থা দেখে সিউড়ি থানার পুলিসকে জানায়। খবর পেয়ে সিউড়ি পুলিশের ট্রাফিক ওসি সুমন প্রামানিক ঘটনাস্থলে পৌছান এবং অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই ব্যক্তিকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান।
এদিকে সকাল ৮ টা থেকে বেলা ১২ অবধি ওই ব্যাক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় কোমড় ভেঙ্গে বাসস্ট্যান্ডে পড়ে থাকলেও কারোর কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিলনা কোন মানুষের। সিউড়ি সরকারি বাসস্ট্যাণ্ডের ভিতরে রয়েছে দুটি সরকারী পরিবহন সংস্থার অফিস সহ টিকিট কাউন্টার। প্রায় ১৭০ টি বাসের শয়ে শয়ে যাত্রি এখান থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করে। তারাও কেউ এক বারের জন্যও ভাবেন নি তাকে সাহায্য করার কথা। এছাড়া দুটি বাস সংস্থার সরকারি কর্মীদেরও একবারের জন্য মনে হয়নি ওই অসুস্থ ব্যক্তির সাহায্য করার কথা। সংবাদ কর্মীরা পৌছতেই ওই অসুস্থ ব্যক্তির ছবি ক্যামেরা বন্দি করার পাশাপাশি পুলিশে খবর দেন। এদিকে সাংবাদিকদের ছবি তোলার কাজ দেখে নড়ে চড়ে বসেন সরকারি বাসের কর্মীরা। কেউ ডিউটি শেষ হওয়ার আগেই দায়িত্ব রেখে পালিয়ে যান। কেউ বলেন তিনি কিছুই দেখেন নি নাকি। ঘটনার সময় সকাল থেকেই উত্তর বঙ্গ পরিবহন সংস্থার ট্রাফিক কন্ট্রোলে দায়িত্বরত ছিলেন নিখিল ফৌজদার নামে এক কর্মী। পুলিশ পৌছানোর আগেই তিনি দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। তার সাথে পড়ে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলে তার ফোন বন্ধ অবস্থায় শোনা যায়। পড়ে উত্তর বঙ্গ পরিবহন সংস্থার আরো এক কর্মী এসআই দিলীপ সাহাকে প্রশ্ন করা হয় আপনি দেখেন নি একজন অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে এখানে? তিনি বলেন, “আমি এখনই এলাম। কিছুই দেখিনি। জানি না কিছুই।” বাসস্ট্যান্ডের বাকি কর্মীরা একে একে এলাকা ছেড়ে যেতে শুরু করেন। অন্যদিকে উত্তর বঙ্গ পরিবহন সংস্থার আধিকারিক কে এদিন তার দপ্তরে পাওয়া যায় নি বেলা ১২টার সময়। কর্মীরা জানান, ডিপো ইনচার্জ অমিত চক্রবর্তী মিটিং বেড়িয়ে গেছেন। উপস্থিত এক কর্মী উত্তম বিশ্বাসকে প্রশ্ন করা হয় আপনি জানেন এখানে একজন অসুস্থ যাত্রি পড়ে রয়েছে? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি খবর পেয়ে ওখানে গিয়েছিলাম। দেখলাম পুলিশ এলো।” তাকে প্রশ্ন করা হয় আপনি জানতেন তো পুলিশকে একটা খবর দেন নি কেন বা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন নি কেন? হাস্যকর এবং অমানবিক ভাবে তিনি উত্তর দেন, “আমাদের কি এখতিয়ার রয়েছে পুলিশকে খবর দেওয়ার? আমি কি করব ডিআই তো নেই।” জখম ব্যাক্তি আনন্দ কোড়া বলেন, বাসের চাদে উঠেছিলাম। ওই রেলের ব্রিজ আসতেই বাসের ভিতর থেকে বলা হল মাথা নিচু করতে। তাতেও ব্রিজের সঙ্গে পিষ্ট হয়ে গেলাম। আমার পায়ে ও কোমরে চোট লেগেছে চলার ক্ষমতা টুকুও নেই। দক্ষিণ বঙ্গ পরিবহন সংস্থার সিউড়ি ডিপো আধিকারিক তাপস মুখার্জি বলেন, বাসের ছাদের কি ভাবে ওই ব্যাক্তি উঠতে দেওয়া হলো। প্রথমেই ভুল সেখানে পরে এই ভাবে ওই বাসের কর্মীদের উচিত ছিল জখম ব্যাক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ওই পরিবহন সংস্থার কর্মীরা এটা অমানবিক কাজ করেছে। ভবিষ্যতে সব কর্মীকে এই বিষয়ে দায়িত্ব বান হতে হবে।।
তথ্যঃ কৌশিক সালুই
[uam_ad id=”3726″]

Comments