Home » অন্যান্য » জমি ও শিল্পের কথা

জমি ও শিল্পের কথা

Written by :- Avhisek Chowdhury

ভাঙড়ে আমরা আরেকবার সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের উত্তরাধিকার বহন করলাম।ঘটনার ময়না তদন্তে মাওবাদী থেকে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ বিভিন্ন তত্ব উঠে এলেও আসল কথাটা বারবার আলোচনার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ কৃষি প্রধান রাজ্য,এখানে কৃষি জমির চরিত্র উর্বর কিন্তু ক্ষুদ্র, কৃষক অনেকাংশেই প্রান্তিক—–এই সব সত্য কে স্বীকার করেও বলতে হয় , কৃষক জমি দিতে অনিচ্ছুক ,এমন বোধ হয় নয়।কারণ সরকারি বা সরকারি মধ্যস্থতায় জমি অধিগ্রহনের ক্ষেত্রে যে সংগঠিত বিরোধ চোখে পড়ছে , পুরোপুরি বেসরকারি বিশেষ করে প্রমোটারী বহুতল বা উপনগরীর ক্ষেত্রে তেমন টি দেখছি না।কারণ টা একটু তলিয়ে ভেবে দেখা যাক।
১)প্রথমত বেকারত্ব ও শিক্ষিত বেকার আমাদের রাজ্যের একটা বড় সমস্যা।পড়াশুনা করার পরেও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় আক্রান্ত একটা প্রজন্ম আর তার সাথেই তার পরিবার।এই পরিস্থিতিতে কোথাও জমি অধিগ্রহণ হলেই মানুষ তার বা তার আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে।আমার জমির উপর যদি কারোর কোটি কোটি টাকার লাভের বুনিয়াদ তৈরি হয় ,তবে আমিও তার ভগ্নাংশ চাইবো—এটাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু বেসরকারি অধিগ্রহণে তো এমনটি ঘটছে না!! ঘটছে না তার কারণ সাধারণ মানুষ বেসরকারি শক্তির সাথে সাধারণ মানুষ এঁটে উঠতে পারছে না।আর বেসরকারি কোম্পানির তুলনায় সরকারের উপর মানুষের প্রত্যাশাও অনেক বেশি।তাই মূলত সরকারি অধিগ্রহণ ই বাধা পাচ্ছে।
২) বেসরকারি অধিগ্রহনকারী শেষ পর্যন্ত নিজের লাভ টুকু বুঝে নেবেন, প্রত্যক্ষ জনকল্যাণ তাঁর উদ্দেশ্য নয়।উপরন্তু তাঁর পক্ষে দুটি সুবিধা রয়েছে। প্রথমত সরকারের জমি অধিগ্রহনের বিরোধী অবস্থান এবং তার আড়ালে প্রচ্ছন্ন উদাসীনতা দ্বিতীয়ত দালাল শ্রেণীর সহায়তা যারা গায়ের জোরে জমি দখলে পটু।এই ক্ষমতার খেলায় জনগণের হেরে যাওয়া একরকম নিশ্চিত, কারণ মানুষ অসংগঠিত।আর এখানেই তথাকথিত”মাওবাদী”, “নকশাল” দের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠছে।মানুষ খড় কুটো ধরে বাঁচার আশায় জেনে বা না জেনে তাঁদের ছাতার তলায় আসছেন,যার ফলাফল আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
কিন্তু এভাবেই কি চলতে থাকবে?হয়তো থাকবে যদি না ক্ষমতার বিন্যাসটা পাল্টায়।সরকার সরাসরি জমি অধিগ্রহণ না করলেও ক্ষতি নেই,কিন্তু জমি দাতার স্বার্থ সুরক্ষিত করতে সরকার কে নাক গলাতেই হবে।দরকার পড়লে দর কষাকষিতেও নামতে হতে পারে।কারণ সরকার যদি সাধারণ মানুষের স্বার্থ সুরক্ষিত না করতে পারে, তবে তাকে জনগণের প্রতিভূ বলা চলে না।অন্তত সাধারণ মানুষ যদি এটুকু উপলব্ধি করতে পারেন যে সরকার তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে, বঞ্চনার হাত থেকে বাঁচাবে ,তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে এমন সমস্যা এড়ানো সম্ভব।হয়তো সম্ভব কৃষি ও শিল্পের সার্থক সহাবস্থান ও।

Comments