বিগত কয়েকদিনে বীরভূমের জেলা চলছে বৃষ্টিপাত। তার জেরে এই জেলার বেশ কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর চাষের ভরা মরসুমে ক্ষতি হয়েছে ধান রোয়া জমি থেকে বীজ তোলা, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সব্জী চাষেও। আর তে চাষিরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়েছে তেমন দাম ও আকাশ ছোয়া হতে চলেছে সাক সব্জীর।
শুধু গত কয়কেদিনে বীরভূমের চারটি বন্যা কবলিত ব্লকে ৪৭ হাজার হেক্টর আমন ধানের জমি জলের তলায় চলে গেছে। এর ফলে বীরভূমের প্রায় ১৪ হাজার কৃষক ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়তে চলছে বলে জেলা কৃষি দপ্তর প্রাথমিক ভাবে অনুমান করছে। বীরভূম জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিনে বীরভূম জেলার তিনটি মহকুমায় বৃষ্টি হয়েছে সর্বাধিক। যা স্বাভাবিকের তুলনায় গড়ে ৩৪ শতাংশ বেশি। কিন্তু বর্ষার শুরুতেই বীরভূম জেলায় প্রায় ১৪৫ শতাংশ বৃষ্টি বেশি হয়েছে। এক সরকারি তথ্য থেকে জানা গেছে, বীরভূমে এবছরের মে মাসে যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ৮৮.৭মিলি, সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ২১৭.৭২ মিলি। শতাংশের হারে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় ১৪৫.৪৫ শতাংশ বেশি। এর পর জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৪৮.৭মিলি, যেখানে বৃষ্টি হওয়ার কথা ২৩৪.২মিলি। যা স্বাভাবিকের থেকে ৩৬ শতাংশ বেশি। আর জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৪০১.০৫ মিলি, যেখানে বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ৩২৪.৫ মিলি। শতাংশের হিসাবে ২৩.৫৯ শতাংশ বেশি। গত ২১ জুলাই থেকে প্রবল বৃষ্টি পাতের সময় ওই দিন সিউড়ি মহকুমায় বৃষ্টি হয় ১২৫মিলি, বোলপুর ৮৫.৮মিলি এবং রামপুরহাট ৭৬ মিলি। এরপর থেকে লাগাতার জেলা জুড়ে বৃষ্টি পাতের পরিমাণ বেরেছে কম বেশি। এই বৃষ্টির জেরে বীরভূম জেলা শুধু নয় পাশাপাশি প্রতিবেশি রাজ্য ঝাড়খন্ডেও বৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে বৃষ্টির জল জেলার বিভিন্ন নদী, জলাধার ও ড্যাম থেকে উপচে পড়েছে। সব থেকে বীরভূমের মোট চারটি ব্লকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্লক গুলি হল সিউড়ি-১ ব্লক, সিউড়ি-২ ব্লক, দুবরাজপুর এবং লাভপুর ব্লক। এদের মধ্যে আবার সর্বাধিক ক্ষতির পরিমাণ লাভপুর ব্লকেই বেশি রয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, সিউড়ি-১ ব্লকে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২ মৌজায় প্রায় ২০০ হেক্টর আমন ধানের চাষ করা জমি নষ্ট হয়েছে। যা একেবারে মাটির সাথে মিশে গেছে। সিউড়ি-২ ব্লকে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২টি মৌজায় প্রায় ৯৫ হেক্টর ধান জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দুবরাজপুর ব্লকে ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৫টি মৌজায় প্রায় ৬৪৫ হেক্টর আমন ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরপর জেলার মধ্যে সব থেকে ক্ষতি গ্রস্থ ব্লক দুবরাজপুরে মোট ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২০টি মৌজায় প্রায় ৩০০০ হেক্টর আমন ধানের জমি জলের তলা চলে গেছে। যার মধ্যে ১৫০০ হেক্টর জমিতে ৩৩ শতাংশের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর বাকি ১৫০০ হেক্টরে ৩৩ শতাংশের কম ক্ষতি হয়েছে। লাভপুর ব্লকে মোট ৮৪৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লাভপুর ব্লকের থিবা অঞ্চলের আমতলা গ্রামের কাছে দুটি জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে চাষিদের। মোট ক্ষতির পরিমাণের হিসাবে এই চারটি ব্লকে জেলা জুড়ে ৪৭৮৫ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে প্রায় ১৪৩০০ জনেরও বেশি চাষির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, এখনো চাষের সময় আছে। যদি ধান চাষের ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে ফের ধান চাষ করা যেতে পারে। তাহলে চাষিরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। আর সেটা না পারলে বিকল্প চাষ করুক চাষিরা, যার প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে কৃষি দফতর।
তথ্যঃ কৌশিক সালুই
[uam_ad id=”3726″]