আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে দেবীর বোধন। আজ থেকেই দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠবে বীরভূম জেলার নানুর থানার কীর্ণাহার ও দুবরাজপুর থানার বালিজুড়ি। জৌলুস কমলেও তিনশো বছরের পুরানো দু’টি পুজোকে নিয়ে মানুষের আবেগ, কৌতূহলের অন্ত নেই। এত আগে থেকে পুজো শুরু হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা পুজোয় ভিড় জমান। আজ দু’টি পারিবারিক পুজোতেই খাওয়া দাওয়ারও আয়োজন থাকছে। অন্যদিকে, প্রতি বছরের মতো এবছরও নানুর থানার দাশকলগ্রামে দেবী পূজিত হবেন অভয়া রূপে। ৫০০ বছরের বেশি পুরানো পুজোর আয়োজকদের দাবি, মাত্র তিন জায়গায় মা দূর্গা অভয়া রূপে পূজিত হন, তার মধ্যে দাশকলগ্রাম অন্যতম।
একটা সময়ে কীর্ণাহারের রায়চৌধুরি বাড়ির যথেষ্টই খ্যাতি ছিল। সেই খ্যাতির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে পরিবারের ১৫দিনের দুর্গোৎসব। আগের সেই জাঁকজমক এখন অনেকটাই ম্লান হলেও পরিবারের সদস্যরা রীতি মেনে বোধনের দিন থেকে দশভূজার আরাধনায় মাতেন। একান্নবর্তী পরিবার ভেঙেছে, কিন্তু এখনও রায়চৌধুরি বাড়ির মহিলারা ভক্তি ভরেই পনেরো দিন ধরে দেবীর দু’বেলা ভোগ রান্না করেন। রায়চৌধুরি বাড়ির পুজোয় এলাকার বাসিন্দারা অংশ নেন। এদিন প্রচুর মানুষের খাওয়ানোরও আয়োজন রয়েছে। পরিবারের সদস্য তথা প্রাক্তন শিক্ষক আশুতোষ রায়চৌধুরি বলেন, অর্থ ও এতদিন ধরে পুজোর সাজ, জোগাড় করার লোকের অভাব থাকলেও এখনও আমরা পূর্বপুরুষদের রীতি বজায় রেখেছি। বোধনের দিন থেকেই মা নিত্য পূজিত হন। তবে কোন মূর্তি হয় না। বোধনের দিন থেকে ঘটে ও সপ্তমীর দিন থেকে নবপত্রিকায় পূজিত হন মা।
অন্যদিকে, বালিজুড়ি গ্রামের কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পুজোয় বোধনের দিনই পঞ্চগ্রামের মানুষের নিমন্ত্রণ থাকে। আগেকার দিনে চট্টোপাধ্যায়দের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো থাকায় বালিজুড়ি সংলগ্ন মঙ্গলপুর, রুপুসপুর সহ পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা বাড়িতে রান্না না করে এক সঙ্গে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে খেতেন। কিন্তু এখন গ্রামগুলির কিছু মানুষ আসেন পুজো দেখতে। প্রায় হাজার খানেক মানুষ খাওয়া দাওয়াও করেন বোধনের দিনই। এখানেও ১৫দিন ধরেই মা পূজিতা হন। সত্যরাম চট্টোপাধ্যায় বলেন, আগের রীতি বজায় রাখতে গিয়ে নানা অসুবিধা হচ্ছে, কিন্তু তবুও বজায় রাখার চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে, স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ নানুর থানার দাশকলগ্রামের সিংহ পরিবারের পুজো। প্রায় ৫০০বছরের বেশি পুরানো এই পুজোয় মা অভয়া রূপী, দ্বিভূজা মা সকলকে অভয় দান করছেন। ৫০০বছর আগে মা এখানে দশভূজা, মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পূজিত হতেন। কিন্তু অষ্টমীর বলির সময়ে মায়ের মূর্তি ও বলির স্থানের মাঝে কেউই আসতেন না। কথিত আছে একটি শিশুকন্যা সেই সময়ে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ার পর তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই রাতেই দেবী সিংহ পরিবারের মাথা বেণীমাধব সিংহ, পুরোহিত ও মৃৎশিল্পীকে একসঙ্গে স্বপ্নে বলেছিলেন, এখানে আমি অভয়া রূপে পূজিত হতে চাই। তখন থেকেই মা এখানে অভয়া রূপে পূজিত হন। পঞ্চমুণ্ডির আসনে মাকে বসানো হয়। কুমারী পুজোরও চল রয়েছে।
পরিবারের সদস্য দেবনারায়ণ সিংহ বলেন, রীতি মেনেই মা এখানে অভয়া রূপে পূজিত হন। কাশী, কলকাতার জোড়াসাঁকো আর এখানে ছাড়া কোথাও মায়ের এই রূপের দর্শন পাওয়া যাবে না।
তথ্য সহায়তায় বর্তমান পত্রিকা
ছবি : নিবেদিতা রায় চৌধুরী
[uam_ad id=”3726″]