Home » জেলার খবর » বীরভূম থেকে সরে যাচ্ছে বিদেশি সংস্থা

বীরভূম থেকে সরে যাচ্ছে বিদেশি সংস্থা

বীরভূম ১৯ জুলাইঃ- দুস্কৃতি তান্ডব এবং শ্রমিকদের দাদাগিরিতে কার্যত পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হল মুরগীর পোল্ট্রী ফার্মের এক বিদেশী সংস্থা। তারা বীরভূম থেকে গুটিয়ে ভিন রাজ্যে রাজ্যে তাঁদের বিনিয়োগ করতে চলেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের অসহযোগিতার ফলে এই শিল্প গোটাতে বাধ্য হচ্ছেন, যদিও মুখ্য মন্ত্রী তাঁদের বিষয়টি দেখলে ফের কারবার শুরু করবেন বলে দাবি করেছেন তারা। এদিকে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে ওই বিদেশি কোম্পানী আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি, করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিপিএফ নামে থাইল্যান্ডের একটি সংস্থা পোল্ট্রি মুরগীর জন্য বীরভূমের খয়রাসোল এবং দুবরাজপুর ব্লকে তাঁদের বিনিয়োগ করে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। ডিম থেকে মুরগী আবার মুরগী থেকে ডিম এবং মুরগীর খাদ্যের জন্য অত্যাধুনিক ফার্ম স্থাপন করে ওই বিদেশি সংস্থাটি। প্রায় হাজার খানেক সরাসরি এবং কয়েক হাজার মানুষের পরোক্ষ ভাবে কর্মসংস্থান হয়েছিল। কিন্তু ফার্মে দুস্কৃতিদের চুরি ও শ্রমিকদের দাদাগিরিতে কার্যত তারা বাধ্য হয়ে সেই ফার্ম গোটাতে বাধ্য হছেন। ইতিমধ্যেই লরি বোঝায় করে তাঁদের মালপত্র পুনে, ব্যাঙ্গালুরু এবং হাইদ্রাবাদে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে তাঁদের বিনিয়োগ হবে।
২০১২ সালে বীরভূম জেলার খয়রাসোল ব্লকের খরিকাবাদ, চুয়াগাড়া, নাকড়াকোঁদা,তালসারি ও ভাড্ডিতে ১ টি করে এবং দুবরাজপুর ব্লকের বালিজুরিতে ২টি ফার্ম লিজ নেন ১৫ বছরের জন্য ব্যাক্তি গত মালিকানাধীন ফার্মের মালিকদের কাছ থেকে। এর সঙ্গে খয়রাসোল এর বারাবন এ ৪০ বিঘে জায়গার উপর তাঁদের নিজস্ব ফার্ম গড়ে ওঠে ওই বিদেশী সংস্থার। ৩৫ দেশের মতো এখানেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে ফার্ম গুলি শুরু করা হয়েছিল। শুরু হয়ে গিয়েছিল উৎপাদনও। কিন্তু সমস্যা শুরু ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে। ওই কোম্পানী সুত্রে জানা গিয়েছে মূল সমস্যা ছিল খরিকাবাদ, চুয়াগাড়া এর ফার্ম দুটিতে। খরিকাবাদের ফার্মে ২০১৬ সালের মে মাসে তাঁদের এক কর্মীর যোগসাজশে স্থানীয় দুক্সৃতির দ্বারা ১৮ লক্ষ টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। সেই কর্মীর কাছে থেকে লোকপুর থানার পুলিশের সহায়তায় ৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হলেও বাকি টাকা উদ্ধার করা যায়নি। পাশাপাশি ওই ফার্ম দুটিতে বহুমুল্যবান যন্ত্রপাতি প্রায়শয় চুরি হয়ে যাচ্ছিল বলে দাবি কোম্পানীর। এর সঙ্গে আরো একটি মূল সমস্যা হল শ্রমিকদের অসহযোগিতা। সকাল ৮ তা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত কাজের সময় হলেও ঠিক মতো কাজ করতো না তারা। যদিও এই ৮ ঘন্টার মধ্যে ১ ঘন্টা করে টিফিন ও দুপুরের খাবারের বিরতি ছিল। সেই খাবারও কোম্পানীর পক্ষ থেকে দেওয়া হতো ৫০ শতাংশ ভর্তুকী দিয়ে। কিন্তু তাতেও শ্রমিক রা ঠিক মতো কাজ করতো না। শ্রমিকদের ফাঁকিবাজি ও দাদাগিরির ফলে উৎপাদন কমতে শুরু করে। ফলে কোম্পানীর উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকে এবং লোকসান শুরু হয়। ফার্মের দাবি জেলা তৃনমূল নেতৃত্ব থেকে পুলিশ ও প্রশাসন কে বারবার জানিয়েও কোন সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই তারা এখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে ভিন রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার সন্দীপ মুখার্জী বলেন, আমরা চেয়েছিলাম বীরভূমের ওই অনুন্নত এলাকায় ফার্ম গড়ে এলাকার কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যদিও বারবার চুরি ও শ্রমিকদের অসহযোগিতার ফলে, আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলছিল। লোকসান শুরু হয়েছিল। বারবার স্থানীয় পুলিশ ও নবান্নে জানিয়েও কোন সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছি সমস্ত আমাদের অত্যাধুনিক মেশিন গুটিয়ে। যদি মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কোম্পানীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাহলে এই রাজ্যে আমাদের কোম্পানী ফের ব্যবসা শুরু করবে। জেলা পুলিশ সুপার সুধীর কুমার নীল কান্তম বলেন, আমার সঙ্গে কোন ভাবেই তারা যোগাযোগ করেন নি। তারা সমস্যা জানিয়ে আমার কাছে আসুক সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, এই ভাবে তাঁদের ফার্ম গুটিয়ে নিয়ে চলে যাওয়া কোম্পানীর হঠকারী সিদ্ধান্ত। আমরা চেষ্টা করবো তাঁদের যে সমস্ত অসুবিধা আছে সেগুলি সমাধান করার।
ছবি ও ভিডিও সুদীপ্ত গঁড়াই
তথ্যঃ কৌশিক সালুই
[uam_ad id=”3726″]

Comments