এই খবরটা সকল বীরভূমবাসীর কাছে গর্বের।।
দুবরাজপুর সারদা বিদ্যাপীঠের ছাত্র মৃণাল দাসের হাত ধরে এল স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সে সোনা।
আভিনন্দন মৃণাল দাস তোমার জন্য আমরা গর্বিত ।
স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সের অধীনে থাকা ‘বোচে বল’-এর জাতীয় স্তরের খেলায় সোনা পেল বাংলার চার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন স্কুল পড়ুয়া।
গত মাসের ২৩ থেকে ২৮ বিহারের পাটলিপুত্র স্টেডিয়ামে ওই প্রতিযোগিতার দলগত বিভাগে সাফল্য পেয়েছে মৃণাল দাস, অর্কজিৎ সাহা, চিরঞ্জিত দাস এবং সৌমজিৎ দেব চৌধুরীরা। এ রাজ্যের স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সের আঞ্চলিক কার্যালয় (কলকাতা) সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা দেশের প্রায় তিনশো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল। জোর টক্করের পরে ঘরে এসেছে সোনা।
প্রতিযোগিতায় সেরা হয়ে উল্লসিত ওই দলের অন্যতম সদস্য তথা বীরভূমের দুবরাজপুরের সারদা বিদ্যাপীঠের একাদশ ছাত্র মৃণাল। সোনাজয়ী এই খেলোয়াড়ের কথায়, ‘‘অন্যদের মতো পড়াশোনা করতে পারি না। কিন্তু সেই আক্ষেপ এই পদক অনেকটাই ভুলিয়ে দিয়েছে।’’ দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে অর্কজিৎ উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের ‘ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট ফর মেন্টালি হ্যান্ডিক্যাপড’ এর ছাত্র, কলকাতার ট্যাংরার ‘আশা নিকেতন’-এর ছাত্র চিরঞ্জিৎ আর সৌমদীপ বরানগরের কে সি মেমোরিয়ালে পড়ে। সোনা পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারাও।
একটি ছোট্ট বলের কত কাছাকাছি বল ছোড়া যায়— বোচে খেলার মূল ভাবনা এটাই। রোমের এক সময়ের বিখ্যাত এই খেলাকে আধুনিক রূপ দিয়েছে ইতালি। এই খেলাটিই পরে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্যে বেছে নেয় স্পেশ্যাল অলিম্পিক্স কর্তৃপক্ষ। স্পেশ্যাল অলিপিক্সের এক আধিকারিক জানান, একক-যুগ্ম ও চার জনের দলগত ভাবে বোচে বল খেলা যায়। রাজ্যের যে চার প্রতিযোগী দলগত সাফল্য পেয়েছে, তারা ছিল ‘খ’ বিভাগে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সেই পড়ুয়া পড়বে আর পাঁচটা স্বাভাবিক পড়ুয়ার সঙ্গেই। এমন ভাবনার পিছনে রয়েছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুটিকে আত্মবিশ্বাস দেওয়া। প্রতিযোগিতায় মনে-প্রাণে খাটলে সেও কিছু করে দেখাতে পারে, সেই সামর্থ্যকে উসকে দেওয়া। তাতে আগেও মিলিছে সাফল্য। এ কাজে সরকারি সহায়তায় সর্বশিক্ষা মিশন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে চলছে। শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলোয় আগ্রহী করতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু খেলাধুলোরও অন্তর্ভূক্তি হয়েছে।
স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রতিযোগিতার জন্যে স্কুলস্তর থেকেই বাছাই শুরু হয়। স্কুলস্তরে সফল হয়ে পুরসভা বা অঞ্চলস্তরে, তারপরে জেলা ও পরে রাজ্যস্তরে সুযোগ মেলে। সাফল্য অব্যহত থাকলে মেলে স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সের অধীনে থাকা জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ।
এমন জয়কে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলেই। সংস্থার রিজিওনাল ডিরেক্টর বিবেক বর্ধন বলছেন, ‘‘যে শারীরিক প্রতিকূলতাকে নিয়ে ওদের নিত্য লড়াই, সেখানে এমন প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়াটাই বড় কথা। পদক জেতাটা বাড়তি আনন্দের। এই জয় ওদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবে।’’ বীরভূমের ছেলের সাফল্যে খুশি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্যে নিযুক্ত সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা কো-অর্ডিনেটর সুখদেব চক্রবর্তীও। তিনি বলছেন, ‘‘এই সাফল্য অন্য পড়ুয়াদেরও উৎসাহিত করবে। এটাই তো বাড়তি পাওনা।’’
সংগৃহিত :- দুবরাজপুর শ্রী শ্রী সারদা বিদ্যাপীঠ।