Home » জেলার খবর » কৌশিকি অমাবস্যায় তারাপীঠে মানুষের ঢল

কৌশিকি অমাবস্যায় তারাপীঠে মানুষের ঢল

কৌশিকি অমাবস্যা উপলক্ষে তারাপীঠের মাতারা মন্দিরে লক্ষাধিক ভক্তদের ভিড়। সেই ভিড় সামাল দিতে কড়া নিরাপত্তায় মুরে ফেলা হয়েছে তারাপীঠ মন্দির চত্বর এলাকা। তারাপীঠ মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে জানা গেছে, এবছর রবিবার রাত্রি ১.৫২মিনিট থেকে সোমবার রাত্রি ১২.১১মিনিট অবধি রয়েছে কৌশিকি অ্যামাবশ্যার পূণ্য তিথি। তাই কাছাকাছি জেলা বা রাজ্য থেকে ভক্তরা ইতিমধ্যেই ভীড় জমাতে শুরু করেছেন। সেই ভিড় সামাল দিতে কড়া নিরাপত্তায় মুরে ফেলা হয়েছে তারাপীঠ মন্দির চত্বর এলাকা। সৌন্দর্যায়ন থেকে যাত্রী স্বাছন্দ, নিরাপত্তা সব কিছুই ঢেলে সাজানো হচ্ছে। যেহেতু এবছর অ্যামাবশ্যার তিথি রয়েছে রবিবার ছুটির দিনে তাই শুধু প্রতিবেশি জেলা ও রাজ্য থেকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ভীড় জমাবেন এই তারাপীঠে বলে মনে করছেন মন্দির কমিটি। এই নিয়ে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ ও মাতারা সেবায়িত কমিটি সমস্ত ব্যবস্থা করেছে বলে দাবী করেছে তারা। রামপুরহাট রেলষ্টেশনে রেল পুলিশ ও উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে যাত্রী সহায়তা ক্যাম্প করা হয়েছে। রামপুরহাট রেল ষ্টেশন থেকে তারাপীঠ পর্যন্ত অটো বা ট্রেকারের ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ব্যাক্তি পিছু ৪০ ও ৩০ টাকা করে। এছাড়া হোটেলের ভাড়াও ৩ দিনের জন্যও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পানীয় জলের জন্য পাউচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে তা আরো সরবরাহ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। নিরাপত্তার জন্য প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশ থাকছে। চুরি, পকেটনমারি বা শ্লীলতাহানি রুখতে সাদা পোশাকের পুলিশ থাকছে। গোটা এলাকায় নজরদারি চালানোর জন্য গোপন ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। মন্দিরের মুল প্রবেশ দ্বারে মেটাল ডিটেক্টার গেট বসানো হয়েছে। তারাপীঠের ভিতরে ও বাইরে কোন যান বাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রামপুরহাট থেকে জাতীয় সড়ক হয়ে যে গাড়ি আসবে সেগুলির জন্য মনসুবা মোড়ে ও সাইথিয়া হয়ে যে গাড়ি আসবে সেগুলিকে ফুলিরডাঙ্গাতে পার্কিং করার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সর্বক্ষণের জন্য মেডিক্যাল টিম ও এ্যাম্বুলেন্স থাকছে। দমকল বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হোটেলের জন্য তিন দিনের প্যকেজ করা হয়েছে। যে ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কেও বেশী নিলে অভিযোগ হলে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহনের হুশিয়ারি দিয়েছে হোটেল ব্যবসায়ীদের। কিন্তু তার পরেও শনিবার তারাপীঠে আগত কয়েকজন পূর্ণ্যার্থী অভিযোগ করেছেন তারাপীঠে বেশির ভাগ হোটেল ও মোটেল গুলি প্রায় পাঁচ থেকে ১০ গুন আবার কোথাও তার থেকেও বেশি ভাড়ার প্যাকেজ হাঁকাচ্ছেন। যেখানে সাধারন হোটেলের একটি কামড়ার ভাড়া বছরের অন্যান্য সময় ১০০০টাকা, সেখান এখন তারা নিচ্ছেন ১০০০০ টাকা। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বেশির ভাগ হোটেল ব্যাবসায়ি। তাদের দাবী তারা প্যাকেজ হিসাবে ভাড়া নিচ্ছেন তিনদিনের জন্য। তাই সবাই ভাড়া বেশি বলছেন। কথিত আছে এই কৌশিকি আমাবস্যাতে তারাপীঠের মহাশ্মশানের শ্বেত শিমুল গাছের তলায় বসে বামাক্ষ্যাপা মা তারার সাক্ষাত পেয়ে সাধক হয়েছিলেন। তাই এই দিনটিতে বহু সাধক তান্ত্রিক এই মহাশ্মশানে যাগযজ্ঞ করেন সিদ্ধি লাভের আশায় এবং বহু পূর্ণার্থীও সিদ্ধি লাভের আশায় মাতারার দর্শনের জন্য আসেন। অন্য মতে পুরানে আছে শুম্ভ নিসুম্ভ দুই অসুরের অত্যাচারে দেবগন অতিষ্ঠ হয়ে মা দুর্গার স্মরনাপন্ন হন। মা দুর্গা তার দেহের কোষ থেকে দেবী কৌশিকির সৃষ্টি করেন ও শুম্ভ নিসুম্ভকে বধ করেন। আর দেবী কৌশিকী হলেন মাতারা। মাতারা সেবাইত সঙ্ঘের সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এবছর উত্তর বঙ্গ এবং বিহারের বন্যার জন্য ব্যাপক প্রভাব পড়েছে তারাপীঠের কৌশিকি অ্যামাবশ্যায়। বহু মানুষ যারা উত্তর বঙ্গের দিক থেকে আসেন বা বিহার থেকে আসেন তারা তাদের হোটেল বাতিল করেছেন। ট্রেন না থাকায় তারা সড়ক পথে এতো কম সময়ের মধ্যে আসতে পারছেন না। এমন কি উত্তর বঙ্গের দিকে যাওয়ার ট্রেন বাতিল থাকায় কলকাতার বহু পর্যটক যেসব রাতের ট্রেনে টিকিট কেটে ছিলেন তারাও তাদের যাত্রা বাতিল করেছেন বেশির ভাগই।” তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী আশিস বন্দোপাধ্যায় বলেন, “নিরাপত্তা ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দের পাশাপাশি তারাপীঠকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সমস্ত ব্যবস্থ্যা রাখা হয়েছে। হোটেল গুলি বেশি ভাড়া নিচ্ছে বলে আমি শুনেছি। তাদের ভাড়া বেধে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও পূণ্যার্থী সমস্যায় পড়েন আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেবো। আর যদি কোনও হোটেল বেশি ভাড়া নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।” বীরভুম জেলা পুলিশ সুপার সুধীর কুমার নীলকান্তম বলেন, “যে কোন ধরনের অপ্রিতিকর পরিস্থিতি ও নাশকতা রুখতে নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছে।”
তথ্যঃ মায়া সালুই

[uam_ad id=”3726″]

Comments