কোয়াক ডাক্তারের হাতে মৃত্যু হল এক মধ্য বয়সী ব্যবসায়ীর। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ওই অভিযুক্ত চিকিৎসক। অভিযোগ পাবার পরেই দোকান সিল করে দেয় পুলিশ। আজ সকালে এই ঘটনা ঘটেছে বোলপুর থানার সিয়ান গ্রামে। এদিন স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোলপুর থানার সিমেদ-বেরুগ্রামের ব্যবসায়ী প্রনব কুমার চৌধুরী [৪৬] গ্রামেই মুদির দোকান চালাতেন। প্রতিদিনের মত আজও তিনি বোলপুর বাজার থেকে দোকানের জিনিস ও সবজি কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে, সিয়ান বাস স্ট্যান্ডে সরস্বতী ফার্মেসীতে গিয়ে অশোক আচার্য যিনি গ্রামে বাবু ডাক্তার বলেই পরিচিত। যদিও পেশায় তিনি কঙ্কালী পঞ্চায়েত এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্থানীয় সুত্রে খবর অভিযুক্ত আশোক আচার্য সকালে ও বিকাল থেকে তিনি তার ওষুধের দোকানে ডাক্তারি করতেন। “ওর একটু ঠাণ্ডা লেগেছিল। তাই বাবু ডাক্তারকে ওষুধ দিতে বলে প্রনব,” বলে জানালেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা অভি চৌধুরী। স্থানীয়দের দাবী বেশ কিছুক্ষন গল্পও করেন দুজনে। তারপর অভিযুক্ত বাবু ডাক্তার তাকে একটি ইঞ্জেকশান দেন। ইঞ্জেকশান দেবার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রনব বাবু। এলাকার লোকজন তাকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এর পরেই উত্তেজনায় ফেটে পড়ে গ্রামবাসীরা। অবিলম্বে দোষী ব্যক্তির গ্রেফতার ও শাস্তি দাবী করে হাসপাতালে মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। যতক্ষণ না দোষীরা গ্রেফতার হচ্ছে ততক্ষন মৃতদেহের ময়না তদন্ত করতে দেওয়া হবে না বলেও দাবী করেন তারা। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডাঃ অমিত মজুমদার জানান, “আমি যেটুকু জানতে পেরেছি যে ওনাকে সেপট্রাইটেন সোডিয়াম গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। এই ইঞ্জেকশানের অ্যানাফেলিট শক হতে পারে যদি অ্যালারজিক কোন সমস্যা থাকে। তবে পোস্ট মরটেম না হলে মৃত্যুর সঠিক কারন বলা সম্ভব নয়।” এদিকে খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে ছুটে আসেন বীরভুম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী। তিনিই কথা বলেন উত্তেজিত গ্রামবাসীদের সঙ্গে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে বিকাশ বাবুর গ্রামও এই সিমেদ-বেরুগ্রাম। বীরভুম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন, “এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনিক স্তরে কড়া ব্যবস্থা নেবার কথা বলা হয়েছে। গ্রামবাসীদের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে বলেছি। ইতিমধ্যেই পুলিশ অভিযুক্ত ধরতে তল্লাশি চালাচ্ছে। দোকানটিও সিল করে দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তির কোন বৈধ কাগজ পত্র ছিল না বলেই শুনলাম। তারমানে বোঝা যাচ্ছে তিনি একজন কোয়াক ডাক্তার।” এদিন সকালে সিয়ান গ্রামে অভিযুক্ত আশোক আচার্যের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল বাড়ি তালা মারা, কেউ নেই। যদিও এক বয়স্কা মহিলা জানালেন তিনি সকালে সবাইকে দেখেছিলেন, কিন্তু এখন বলতে পারবেন না যে তারা তালা মেরে কোথায় গেছে। মৃতের পরিবারের তরফ থেকে পুরো বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ সুত্রে খবর তারা অভিযুক্ত অশোক আচার্যের ওষুধের দোকান সরস্বতী ফার্মেসী সিল করে দেওয়ার পর তারা সব জায়গায় খোঁজ করা শুরু করেছেন, তল্লাশিও চলছে – কিন্তু এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নি। বোলপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, “অভিযোগ মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তের খোজে তল্লাশি চলছে।”
তথ্যঃ কৌশিক সালুই
[uam_ad id=”3726″]