Home » জেলার খবর » কুসংস্কারে বলি যুবক

কুসংস্কারে বলি যুবক

ফের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের নজির পাওয়া গেলো বীরভূমের এক গ্রামে। চিকিৎসা না করিয়ে বাস্তু দোষ কাটাতে তন্ত্র বিদ্যার সাহায্য নিয়ে স্বামীকে মেরে ফেলেছেন স্ত্রী ও তার বাবার বাড়ির লোকজন। এই অভিযোগ তুলে স্ত্রী ও তার ভাইকে বেধরক মারধোর করে ক্লাবে আটকে রাখলো ছেলের পরিবার ও গ্রামবাসীরা। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সদাইপুর থানার তাপাশপুর গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই গৃহবধু ও তারে ভাইকে গ্রাম বাসীদের কাছ থাকলে উদ্ধার করে। যদিও মৃত যুবকের স্ত্রী ও তার দাদা ঘটনার কথা কার্যত স্বীকার করে জানিয়েছেন তাকে সুস্থ করার জন্য পুজোপাঠ করা হতো, কোনো তন্ত্র সাধনা নয়।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে মৃত যুবক হলেন অভিজিত বাগদী(২২)। বাড়ি তাপাসপুর গ্রামে। রবিবার তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার খবর গ্রামে চাউর হতেই শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। স্ত্রী ও দাদা পবন বাগদিকে ধরে ব্যাপক মারধোর করে ক্লাবে তালাবন্দি করে রেখে দেয় গ্রামবাসী ও অভিজিতের পরিবার। ঘটনার খবর পেয়ে সদাইপুর থানার পুলিশ তাঁদেরকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে। বছর দুয়েক আগে অভিজিতের সঙ্গে মহম্মদ বাজারের শেওড়া কুড়ির গ্রামের সাবিত্রী বাগদির বিয়ে হয়। তাঁদের এক বছর বয়সী সন্তান আছে। মৃত যুবকের পরিবারের দাবি বিয়ের পর মাস দুয়েক পর সাবিত্রী বাবার বাড়ি চলে যায় স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে। মাস তিনেক বাবার বাড়িতে কাটানোর পর ফের শ্বশুর বাড়িতে ফিরে আসে তার বাবা ও মাকে সঙ্গে নিয়ে। সেই সময় তারা জানায় জামাই এর বাড়িতে অশুভ শক্তি আছে তা তাড়াতে হবে। সেই মতো মেয়ের পরিবার জামাই এর বাড়িতে তন্ত্র সাধনা করে অভিজিতের ঘরে সেই তন্ত্র সাধনার বেশ কিছু নমুনাও দেখতে পাওয়া যায় বলে গ্রাম বাসীদের দাবি। সাবিত্রীর এক তন্ত্র সাধক মামা অজিত ডোম তাপাস পুরে গিয়ে তন্ত্র সাধনা করে আসেন বলে অভিযোগ। তন্ত্র সাধনা পর থেকেই অভিজিতের শরীর খারাপ হতে শুরু করে মা ও পরিবারের দাবি। অভিজিতের স্ত্রীর দাবি মাঝে মধ্যে স্বামীর মানসিক ভারসাম্য ঠিক থাকতো না, রক্ত বমিও করতো। অভিযোগ চিকিৎসা না করিয়ে তার স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন তন্ত্র বিদ্যার সাহায্য নেয় সেই অসুখ সারানোর জন্য। পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে গেলে তখন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়। এর মধ্যে রবিবার সে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। মারধোরের খবর পেয়ে সদাইপুর থানার পুলিশ তাপাসপুর গ্রামে গিয়ে ওই গৃহ বধু ও তার ওই দাদাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। যদিও এই ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি বলে পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে। এদিকে বিশেষ সুত্রে জানা গিয়েছে অভিজিত রক্তাপ্লতা ও কিডনি জনিত সমস্যার জন্য মারা গিয়েছ।
মৃত যুবকের মা ছবি বাগদি বলেন, বিয়ে পর থেকেই বৌমার অস্বাভাবিক আচরন ছিল। আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করতো আর হুমকি দিয়ে বলতো তোমরা বেশী বাড়াবাড়ি করলে স্বামীকে ভাতের সঙ্গে বিষ দিয়ে মেরে দেবো। ওঝা গুনিন দিয়ে মুখের কথা বন্ধ করে দেবো। ছেলেকে বৌমা তার পরিবার চিকিৎসা না করিয়ে গুনিন ওঝা দিয়ে তন্ত্র সাধনা করে মেরে ফেলেছে। অভিজিতের স্ত্রী সাবিত্রী বাগদি বলেন, স্বামীর শরীর খারাপ হয়েছিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। তিন বোতল রক্ত লেগেছিল হাসপাতালে মারা যায়। তার আগে স্বামীর মাথা খারাপ হয়েছিল। আমার মা বলেছিল আমার মামা অজিত ডোম ঠিক করতে পারে। মারা ঝাড়ফুঁক করেছিল এবং তখন বলেছিল বাড়ির দোষ আছে। সেই দোষ কাটাতে বাড়িতে ঘট স্থাপন করতে হবে ও সত্য নারায়ন পুজো করতে হবে। মামার কথা মতো আমরা সেই কাজ করেছিলাম’’। বীরভূম জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে শিক্ষক শুভাশিস গড়ায় জানান, এখনো মানুষ তন্ত্র সাধনা বিশ্বাস করছে চিকিৎসা না করিয়ে ঝাড়ফুঁক এর উপর বিশ্বাস রাখছে। আমরা ওই এলাকায় গিয়ে পরিবার গ্রাম বাসী এবং মেয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবো।
তথ্যঃ কৌশিক সালুই
ভিডিও সাহেব
[uam_ad id=”3726″]

Comments