যে মেলার কথা না বললে বাংলার মেলা সম্পূর্ণতা পায় না, তা হল শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা। শুধুমাত্র বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত বলেই নয় বরং সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের বাইরে সমাজ সংস্কারক রবীন্দ্রনাথের যে পরিচয়, তা এখানে বিশেষভাবে অনুভূত হয়। অনুভূত হয় বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনে মেলার গুরুত্বও।
পৌষ মেলার সূচনা হয় ১৩০২ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ (১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ)। তবে ওই দিনটির ইতিহাস আরও ৫০ বছরের পুরনো। জানা যায় ১২৫০ সালের ৭ পৌষ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। সেই দিনটিকে কেন্দ্র করে উৎসব ও মেলার ভাবনা ছিল দেবেন্দ্রনাথের। শান্তিনিকেতনের আশ্রম ডিডেই তার প্রমাণ মেলে। সেখানে ট্রাস্টিগণ ওই জমিতে মেলা বসানোর উদ্যোগ নেবেন বলে লেখা আছে।
এক সময় এ মেলা ভুবনডাঙার মেলা হিসেবে পরিচিত ছিল। মেলার বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান আসর বসে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশের মাঠে। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেলে বিশ্বভারতীর অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে মেলারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। ১৯৬১ সালে মেলা উঠে আসে পূর্বপল্লির মাঠে। এখন অবশ্য তাতেও স্থান সংকুলান হয় না, প্রকৃতপক্ষে পৌষ মেলা চলে গোটা শান্তিনিকেতন জুড়েই। ৭ পৌষ সকালে এখানে ব্রহ্মোপাসনার মাধ্যেমে মেলার সূচনা হয়। আশ্রমিকদের কথায় এটা পৌষ উৎসবের সপ্তমী। বক্তৃতা, স্মৃতিতর্পণ যেমন চলে, তেমনই চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আসেন বিভিন্ন রাজ্য ও বাংলাদেশের শিল্পীরা। থাকে বাউল-ফকিরদের গান।
এ মেলার এক বিশেষত্ব তার হস্তশিল্প ও গ্রামীণ কৃষ্টিতে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে প্রতিটি দ্রব্যই বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরকে আমন্ত্রণ জানানো হয় অংশ গ্রহণের জন্য। থাকে মৃৎশিল্প, ডোকরা শিল্প, বাঁশি, ডুগডুগি, একতারা। বিশ্বভারতী ও শ্রীনিকেতনের স্টলে পাওয়া যায় বই, বস্ত্র ও চর্মজাত সামগ্রী। কুটির শিল্পের ক্ষেত্রে শ্রীনিকেতনের ভূমিকার নিদর্শন মেলে এই মেলায়।
সরকারি ভাবে এবার ৬ দিনের মেলা। সংগঠকদের সূত্র অনুযায়ী প্রায় ১০০০-১২০০ দোকান বসে। মাটিতে বসা দোকানের সংখ্যাও প্রায় সমান। বহু ভিনদেশি পর্যটকও মেলা উপলক্ষে শান্তিনিকেতনে অস্থায়ী বাসা বাঁধেন।
ছবি সুধী রঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে নেওয়া।
পৌষ উৎসব ১৪২৪ -এর প্রস্তুতি ও অনুষ্ঠানসূচী—
৬ই পৌষ – ২২ শে ডিসেম্বর ২০১৭, শুত্রুবার — বৈতালিক (আজি যত তারা তব আকাশে) , সময় রাত্রি ৯ টা, স্থান গৌরাঙ্গ প্রাঙ্গণ।
৭ ই পৌষ – ২৩ শে ডিসেম্বর ২০১৭ , শনিবার — বৈতালিক (মোরে ডাকি লয়ে যাও মুক্ত দ্বারে) , সময় ভোর ৫:৩০ টা, স্থান গৌরাঙ্গ প্রাঙ্গণ।
উপাসনা – সকাল ৭:৩০ টা, স্থান – ছাতিমতলা।
বিশ্বভারতীর পুস্তক প্রকাশ – সকাল ৯:৩০ টা, স্থান – মেলা প্রাঙ্গণ।
* বিকেল ৩ টায় আশ্রমিক সঙ্ঘ ও বিকাল ৩:৩০ টায় আলাপিনী মহিলা সমিতির অনুষ্ঠান আম্রকুঞ্জে।
* সন্ধ্যায় আলোকসজ্জা ছাতিমতলা ও উদয়ন বাড়ি।
৮ই পৌষ — ২৪ শে ডিসেম্বর ২০১৭, রবিবার — বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা দিবস এবং পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের নিদর্শনপত্র প্রদান অনুষ্ঠান সকাল ৮ টা, স্থান – আম্রকুঞ্জ।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ স্মারক বক্তৃতা – বিকাল ৩ টায়, স্থান – কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার।
৯ই পৌষ, ২৫ শে ডিসেম্বর ২০১৭ , সোমবার –
পরলোকগত আশ্রমবন্ধুদের স্মৃতিবাসর – সকাল ৮ টা – স্থান – আম্রকুঞ্জ।
প্রাক্তনীদের অনুষ্ঠান – বিকাল ৩ টা – স্থান – আম্রকুঞ্জ।
খ্রীষ্ট উৎসবের মন্দির – সন্ধ্যা ৫:৩০ টা – স্থান – উপাসনা গৃহ।
-বিজ্ঞাপন-
[uam_ad id=”3726″]