দুটো শ্রেণি কক্ষে কি পাঁচটি শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বসানো যায়? যেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২৩? সেটাই হচ্ছে পারিসর প্রথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয় টি সাঁইথিয়া ব্লকের মাঠপলশা অঞ্চলে অবস্থিত, সিউড়ী-সাঁইথিয়া সোজা রুটে সিউড়ী থেকে ২০ মিনিটের পথ।
বিদ্যালয়ের দুটি ভবন, প্রথমটি পুরানো এবং একতলা। যার দুটি কক্ষের একটি অফিস ঘর অন্যটি ব্যবহারের অযোগ্য। দ্বিতীয় ভবনের দুটি তলায় দুটিমাত্র শ্রেণিকক্ষ। একটিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি অন্যটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জায়গার অভাবে ঘেষাঘেষি করে বসতে হয়। আর প্রাক-প্রাথমিক বসানো হয় বারান্দায়।
মিড-ডে-মিলের রান্নাঘর আছে, কিন্তু বর্ষার সময় রাঁধুনিদের জল পেরিয়ে রান্নাঘরে ঢুকতে হয়। টিনের ছাউনিযুক্ত খাওয়ার ঘর আছে, কিন্তু গরমে সেখানে বসে খাওয়া দুষ্কর।
শৌচালয় আছে দুটি, যার একটি ব্যবহার করা হয়, অন্যটি জল নিকাশির অসুবিধার কারণে জন্মলগ্ন থেকেই বন্ধ পড়ে আছে। অর্থাৎ বালিকাদের জন্য কোনো আলাদা শৌচালয় নেই।
বিদ্যালয়ের সম্মুখেই একটি পুকুর আছে, বলাই বাহুল্য কিরকম ঝুঁকি নিয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা করতে হয়। কারন পড়াতে পড়াতেও তাঁদের নজর রাখতে হয় শৌচালয়ে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীটি পুকুরে পড়ে গেল কিনা।
পানীয়জলের জন্য বিদ্যালয়ের একটিই টিউবওয়েল আছে, যেটা গ্রীষ্মের সময় অত্যন্ত টান হয়ে যায়, তাই ছাত্র-ছাত্রীদের টিউবওয়েল ব্যাবহার করারর জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য নিতে হয়।
বিদ্যালয়ে কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় মিড-ডে-মিল খাওয়ার সময় কুকুরের উৎপাত সামলাতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের লাঠি হাতে দাঁড়াতে হয়।আর বিদ্যালয় ছুটির পর বিদ্যালয় চত্বর ছাগল ও কুকুরের দখলে চলে যায়। পরের দিন বিদ্যালয় খোলার সময় দেখা যায়, ফাঁকা বারান্দায় ছাগল-ভেড়ার এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ছাগল-ভেড়া-কুকরের বিষ্টায় ভর্তি। পরিস্থিতি সামলাতে ত্রাতা হিসাবে শিক্ষকদের কোদাল নিয়ে মাঠে নামতে হয়।
এ সকল সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নিরোদ বরন সাহার নির্দেশে সহঃ শিক্ষক বাসুদেব সূত্রধর মহাশয় এডিএম(ডি) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, এডিএম(ডি) জানিয়েছেন বর্তমানে জেলায় সেই রকম কোনো তহবিল নেই। আপনি বরঞ্চ এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দারস্থ হন।
কি কি প্রয়োজন জানতে চাওয়াই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জানালেন,
১. তিনটি শ্রেণি কক্ষ(দুটি আছে) ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনের জন্য একটি বড় হলঘর যুক্ত ভবন।
২.রান্নাঘরের ঢোকার মুখের জায়গার জল নিকাশির সুবন্দোবস্ত করা।
২. ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে-মিল খাওয়ার জায়গার উন্নতিসাধন (পাকা ছাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করা)।
৩.ছাত্রীদের জন্য নির্মিত শৌচালয়টির জল নিকাশির ব্যবস্থা করা অথবা অন্যস্থানে তা নির্মাণ করা।
৪.পানীয় জলের অসুবিধা দূর করার জন্য সাবমার্সিবল পাম্প বসানো এবং জল শোধনের মেশিন বসানো (RO)।
৫.সীমানা প্রাচীর দেওয়া, বিশেষ করে পুকুরের দিক টি অবিলম্বে সীমানা প্রাচীরের ব্যবস্থা করা।
৬.এবং সর্বোপরি ছাত্র সার্থে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
পরিকাঠামোর এত ঘাটতি সত্বেও তপশিলী জাতি ও উপজাতি অধ্যুষিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকশিক্ষিকাবৃন্দ ছাত্র-ছাত্রীদের সার্থে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। সঙ্গে ঐ বিদ্যালয়ে কবে সুদিন আসবে, সেই আশাই দিন গুনছেন।
যোগাযোগ:-৯৯৩৩৩৭৪০৫৬ বাসুদেব সূত্রধর(নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহঃ শিক্ষক)
৮৬৭০৩০৩১৩২:-ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক, পারিসর প্রাথমিক বিদ্যালয়।