বীরভূম জেলার প্রান্তিক অঞ্চল রাজনগরে পীরের দরগায় পালিত হল নবান্ন উৎসব। নতুন ধানের অন্ন নবান্ন। মাঠের নতুন ধান বাড়ীতে এনে তা থেকে চাল বের করে সেই চালের তৈরিকৃত বিভিন্ন ধরনের অন্নকেই “নবান্ন” বলা হয়। গ্রাম বাংলার মানুষেরা যাকে চলতি কথায় ‘লবান’ বলে থাকেন। অগ্রহায়ণ মাসের পয়লা তারিখে সাধারণত এই নবান্ন বা লবান পালিত হয়ে থাকে। মাঠের আমন ধান কার্ত্তিক মাসের শেষের দিক থেকেই পাকতে শুরু করে। মাঠের মধ্যে শিশিরভেজা সোনালী ধান গ্রাম বাংলার মানুষের মধ্যে এনে দেয় খুশির জোয়ার। এলাকার হিন্দু- মুসলিম সমস্ত ধর্মের মানুষ মেতে ওঠেন এই নবান্ন উৎসবে।
হিন্দু নিয়মানুসারে অগ্রহায়ণ মাসের পয়লা তারিখে সকালবেলায় বাড়ির কর্তা স্নান সেরে ধান মাঠে গিয়ে মাঠের ঈশান কোণে এক আটি ধান কেটে তাতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে সেটিকে একটি কাপড়ে মুড়েন যেটিকে মুট বলা হয় এবং তিনবার শাঁখ বাজিয়ে সেই মুটটিকে মাথায় নিয়ে রাস্তায় কোন কথা না বলে বাড়ি ফেরেন। বাড়ির দরজায় আসতেই বাড়ির গৃহকর্ত্রী তাঁর পাধুইয়ে দেন এবং নিজের মাথার চুল দিয়ে পা মুছে দেন। পরে সেই মুট লক্ষীর থানে রাখেন এবং সেই নতুন ধান থেকে পায়েস বা চিড়ে তৈরি করে তা নিয়ে যাওয়া হয় রাজনগরের মীর সাহেবের দরগায়। সেখানে তা সিন্নি হিসেবে দেওয়া হয়।
অপর দিকে মুসলিম ধর্মের মানুষেরা ও নতুন ধানের পায়েস কেউবা চিড়ে-মিস্টি এনে দরগায় সিন্নি হিসেবে তা দেন। রাজনগরের মালিপাড়া গ্রামের নিত্যানন্দ দত্ত বলেন তাঁরা পাঁচ পুরুষ ধরে বংশপরম্পরায় মীর সাহেবের দরগায় নবান্ন পালন করে আসছেন। সেনাপতি রাউত, সেখ নাজু, উত্তম দত্ত, মফিজ আলি, সেখ হালিমদের উপস্থিতিতে দরগা চত্বর এদিন হয়ে ওঠে সম্প্রীতির মহামিলনক্ষেত্র। রাজনগর ও তার আশেপাশের বহু গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এদিন এখানে জমায়েত হন। আয়োজন করা হয় বাউল ও মুর্শিদী গানের অনুষ্ঠানের।
ছবি ও তথ্য- খান আরশাদ, রাজনগর।
[uam_ad id=”3726″]