শাস্ত্রে রয়েছে যে কোনও পুজোর আগেই গণেশ পুজো করতেই হবে ৷ মঙ্গলজনক কাজের শুরু হয় গণেশেরই হাত দিয়ে৷ আজ শুত্রুবার সেই গণেশ চতুর্থী ৷ গোটা দেশের সাথে সাথে আমাদের জেলা জুড়েও আড়ম্বর সহকারে পূজিত হবেন গণেশ৷ সংসারে শ্রীবৃদ্ধি আনতে, সুখ আনতে, সিদ্ধি লাভের জন্য গণেশ পুজো অত্যন্ত জরুরী ৷
সনাতন ধর্মালম্বীদের আরাধ্য গণেশের জন্ম থেকে শুরু করে তাঁর প্রথম পুজো হওয়া পর্যন্ত এমন বহু ঘটনা রয়েছে, যা আমাদের অনেকের অজানা। অনেকে ডাকেন গণপতি নামে, অনেকে ডাকেন গণেশ, অনেকে ডাকেন বিনায়ক নামেই ৷
আগে জেনে নেওয়া যাক গণপতি গণেশের জন্মের কাহিনি। কথিত আছে, উবটন দিয়ে একটি বালকের মূর্তি তৈরি করেন মাতা পার্বতী। এর পর তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। জীবনদানের পর ওই বালককে নিজের পুত্র স্বীকার করেন মাতা পার্বতী। শুধু তাই নয় পরম শক্তিশালী এবং বুদ্ধিমান হওয়ারও আশীর্বাদ দেন তাকে। যে সময় গণেশের জন্ম হয়, তখন দেবাদি দেব মহাদেব কৈলাশে ছিলেন না।
কৈলাশ ফেরার পর গুহদ্বারে একটি বালককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সেই গুহাতেই ছিলেন পার্বতী। মা-এর আদেশ মেনে শিবকে ওই গুহায় প্রবেশ করতে দেননি গণেশ। ফলে গণেশের ওপর রেগে যান মহাদেব। এর পরই দেবতাদের সঙ্গে গণেশের যুদ্ধ বাধে। একে একে সমস্ত দেবতাই গণেশের শক্তির সামনে পরাজিত হন। এর পর ত্রিশূল দিয়ে নিজের অজান্তেই পুত্র গণেশের শিরোচ্ছেদ করেন মহাদেব।
পুত্র গণেশের মৃত্যুতে ক্রুদ্ধ পার্বতীকে শান্ত করতে অবশেষে পুত্র গণেশের প্রাণ ফিরিয়ে দেন মহাদেব। হাতির মাথা ওই বালকের দেহে যুক্ত করা হয়।
জন্মের কিছু সময় পর পিতার সঙ্গে যুদ্ধ এবং তার পর প্রথম পূজ্যের আসন লাভ করেন তিনি। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার জন্ম সময়ের কারণ।
শাস্ত্র মতে, ভাদ্রপদ শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে গণেশের জন্ম হয়। তাই শাস্ত্রে ভাদ্রপদ শুক্লপক্ষের চতুর্থী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনই সর্বত্র গণেশ চতুর্থী পালিত হয়।
জ্যোতিষশাস্ত্রে চতুর্থীকে রিক্তা তিথি বলা হয়েছে, সে দিন কোনও শুভ কাজ হয় না। কিন্তু সে দিনই গণেশের জন্মদিন হওয়ায় চতুর্থীতে রিক্তা তিথির দোষ গ্রাহ্য করা হয় না। তাই সমস্ত শুভ কাজ করা যায়। গণেশের কুষ্ঠিতে লগ্নে বৃশ্চিক রাশি রয়েছে এবং মঙ্গল বিরাজ করছে।
লগ্নস্থানে শনির পূর্ণদৃষ্টি রয়েছে। আবার সূর্যের ওপর শনির দৃষ্টি থাকার ফলেই বাবার হাতে পুত্রের শিরোচ্ছেদ হয়।
গণেশের কুষ্ঠিতে লগ্ন এবং লগ্নেশে বৃহস্পতির পূর্ণ দৃষ্টি রয়েছে। বৃহস্পতি দ্বিতীয় এবং পঞ্চম গৃহের স্বামী। অন্য দিকে বুধও স্বরাশির। এ কারণে গণেশ বুদ্ধি এবং জ্ঞানের দাতা এবং প্রথম পূজ্য।
গণেশের কুষ্ঠিতে পঞ্চমহাপুরুষ যোগের মধ্যে শশ এবং রুচক নামের যোগ তৈরি হয়। দসমেশ নিজের গৃহে রয়েছেন, তাই গণেশ শিবের গণের অধ্যক্ষ। তিনি গণাধ্যক্ষ নামেও পরিচিত।
গণেশের অপর নাম বিঘ্নহর্তা। কারণ তিনি সমস্ত ধরনের বিঘ্ন-বাধা দূর করেন। লগ্নে অবস্থিত মঙ্গলে শনি এবং বৃহস্পতির দৃষ্টির কারণে তিনি এই ক্ষমতা পান।
ছবি : প্রিয়াঙ্কা মন্ডল
বোলপুর
[uam_ad id=”3726″]