ইচ্ছা ছিল বড় খেলোয়ার হওয়ার। সেই স্বপ্ন দিনের আলো দেখেনি নানান প্রতিবন্ধকতায়। কিন্তু সেই ‘প্রতিবন্ধকতা’ যাতে আর কারোর কাছে বাঁধা না হয় তারজন্য জান লড়িয়ে দিচ্ছেন বীরভূমের আহমেদপুরের ভাস্কর চ্যাটার্জী। তাই তো আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কচিকাঁচা, স্কুল পড়ুয়া, কলেজ পড়ুয়াদের নিয়ে গত তিন বছর যাবত স্বেচ্ছাশ্রমে চালিয়ে যাচ্ছেন ভলিবল ক্যাম্প। সাধ্য যে খুব বেশী আছে তা নয়। নিজে সামান্য এক প্রাথমিক শিক্ষক। কিন্তু স্বপ্ন অনেক বড়।
আহমেদপুরের বাসিন্দা, মৃতদাসপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভাস্কর চ্যাটার্জী শিক্ষক হিসাবে বেশ জনপ্রিয় এলাকায়। তবে এখন তারচেয়েও বেশ নামডাক ভলিবলের ‘স্যার’ হিসাবে। একক প্রচেষ্টায় প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেছে বেছে গরিব ঘরের ছেলেদের এনে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভলিবল খেলোয়াড় তৈরীর লক্ষ্যে করে চলেছেন নিরলস পরিশ্রম। সামান্য মাইনের বাজেটের মধ্যে সংসার খরচের পাশাপাশি জায়গা করে ক্যাম্প চালানোর খরচও।
আহমেদপুরেরই এক খেলাপ্রমী ব্যক্তি ভলিবল অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করতে দিয়েছেন নিজের জায়গা। কেউ দিয়েছেন নেট, কেউ বা দিচ্ছেন বল। সমাজসেবামূলক কাজের জন্য সুপরিচিত আহমেদপুর জয়দূর্গা টাউন ক্লাবও বাড়িয়ে দিয়েছেন যথাসাধ্য সাহায্যের হাত। সকল সহায়তাকে একত্রিত করেই এগিয়ে চলেছে ভাস্করবাবুর ‘আহমদেপুর ভলিবল একাডেমী’।
বিকেল হতেই আহমেদপুর, নিমগড়িয়া, জইতা, নানুবাজার প্রভৃতি এলাকা থেকে কঁচিকাঁচা, স্কুল পড়ুয়া, কলেজ ছাত্র, কলেজ উত্তীর্না হাজির হয়ে যান আহমেদপুরের বাবুপাড়ার একাডেমীতে। সেখানেই চলে ভাস্কর চ্যাটার্জীর নজরদারীতে কড়া অনুশীলন। ইতিমধ্যেই এই ক্যাম্পের অনি সিংহ জায়গা করে নিয়েছে অনুর্ধ সতেরো জেলা দলে। এছাড়াও বড় খেলোয়ার হওয়ার গুণের সন্ধান মিলেছে শান্তুনু ব্যানার্জী, রাজ সিংহ, রাজকুমার দে-দের মধ্যে।
প্রশিক্ষক ভাস্কর চ্যাটার্জী কথায়, ‘‘দিন দিন যেভাবে কঁচিকাঁচাদের মধ্যে মাঠ বিমুখতা বাড়ছে তা সমাজের পক্ষ ক্ষতিকারক। মূল্যবোধ তৈরীর ক্ষেত্রে অন্তরায়। প্রতিভা থাকলেও পরিচর্যার অভাবে তা হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই ভাবনা থেকেই এই প্রচেষ্টা। এক এক করে বর্তমানে আশপাশের এলাকার প্রায় ২৫-২৬ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত আসে অনুশীলনে।’’
শিক্ষার্থী অনিকেত সরকার, রাজকুমার দে,শান্তুনু বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস ভাণ্ডারীরা জানায়, ‘‘স্যারের সান্নিধ্য পেয়ে আমরা গর্বিত। চাই ভালো খেলোয়ার হতে।’’
তবে ভাস্কর চ্যাটার্জীর আক্ষেপ, ‘‘স্থায়ী জায়গা, উপযুক্ত পরিকাঠামো, আধুনিক প্রশিক্ষন অভাব খুব চিন্তা জাগায়। আমার মত গেঁয়ো কোচ দিয়ে ছাত্ররা কতটা উন্নতি করতে পারবে তা নিয়ে সংশয়েই আছি।’’
ছবি ও তথ্যঃ রণদীপ মিত্র
-বিজ্ঞাপন-
[uam_ad id=”3726″]