Home » জেলার খবর » জেলায় নজরুল জয়ন্তী পালন

জেলায় নজরুল জয়ন্তী পালন


আজ বীরভূমের বিভিন্ন স্থানে পালিত হচ্ছে নজরুল জয়ন্তী।কবি নজরুল হলেন বাংলার কবি, বাঙালির কবি, বাংলার সর্বসাধারণের কবি। ক্ষণজন্মা ও ক্ষণকালীন সক্রিয় এ কবির অবদান বাংলা সাহিত্যে অপরিসীম। স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে তার জীবদ্দশাতেই বড় মাপের কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। অগ্রণী বাঙালি কবি, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবিও।

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে –- কাজেই “বিদ্রোহী কবি”। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।

নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী। এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল।

তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্য তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল। এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামাসংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।
নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন জেলার বিভিন্ন অংশের আদিবাসী মহিলারা। দুবরাজপুর অঞ্চলেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুবরাজপুরের পৌরসভার চেয়ারম্যান পীযূষপান্ডে মহাশয়। এছাড়াও উপস্থিত থাকতে দেখা গেল সেখানকার আরও কিছু স্বনামধন্য ব্যক্তিকে।এদিন দুবরাজপুর পাওয়ার হাউস মোড়ের কাছে কবি নজরুলের একটি পূর্ণাবয়ব ফাইবারের মূর্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে স্থাপন করা হয়। গনেশ হোটেল এলাকায় আগামীদিনে একটি আবক্ষ নজরুল মূর্তি স্থাপন করা হবে এবং ওই এলাকার নামকরণ করা হবে ‘ নজরুল চক ‘ , এমনটাই জানান পুরপ্রধান। এভাবেই কবি নজরুলকে দুবরাজপুরের বুকে এক স্থায়ী শ্রদ্ধার আসনে আসীন করতে চায় দুবরাজপুর পুরসভা।।
ছবি ও তথ্যঃ নয়ন দাঁ

Comments