শিক্ষক দিবসে সিউড়ি ১নং ব্লকের কড়িধ্য যদুরায় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ডঃ কল্যাণ ভট্টাচার্য মহাশয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে সম্মানিত হলেন জেলার আরও এক শিক্ষক লাভপুর কালিকাপুরডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্থপ্রদীপ সিংহ মহাশয়। এমন পুরস্কারের আনন্দে আত্মহারা স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক শিক্ষিকারা।
জেলার দুই শিক্ষক সম্পর্কে জেনে নিন কিছু তথ্য।
ডঃ কল্যাণ ভট্টাচার্য : দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে স্কুলের উন্নয়নে নিরলসভাবে পরিশ্রম করার জন্যে এই পুরস্কার। বোটানিতে এম এ করার পর লাল মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি বিষয়ে পি এইচ ডি করে যোগ দেন চৌহাট্টা হাইস্কুলে। ২০০০ সালে প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন কড়িধ্যা যদুরায় হাইস্কুলে। স্কুলে যোগ দিয়েই পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেবার পাশাপাশি একটা জায়গা ভরাট করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষাক্ত ছাই সারে পরিনত করে স্কুলের বাগানে কাজে লাগান। তাঁরই উদ্যোগে স্কুলের বাগানে ফলতে থাকে বেগুন, ঢেঁড়স, লাউ, কুমড়ো, পেঁপে এমনই কত সব্জী। স্কুলের রুমের মধ্যেই ছাত্র ছাত্রীরা মাশরুম চাষ করে চলেছে। তৈরি হচ্ছে কেঁচো সার। বিষাক্ত প্যাথেনিয়াম দমন করে জৈব সার তৈরী করছে এই প্রধান শিক্ষকের উৎসাহে ছাত্রছাত্রীরা। আর নিজেদের ফলানো সব্জী দিয়েই চলছে মিড ডে মিল। ভিতরের জলাভূমিতে মাছ চাষ করে নজর কাড়ছে এই স্কুল। শুধু তাই নয় কল্যাণ ভট্টাচার্য মহাশয়ের উদ্যোগে স্কুলে তৈরি হয়েছে ভেষজ উদ্যান। ৭০০ রকমের ভেষজ উদ্ভিদ আর তার পাশে পাশে বোর্ডে ভেষজের নাম, বৈজ্ঞানিক নাম, উপকারিতা লিখে এই সব উদ্ভিদ চেনানোর কাজ করে চলেছেন তিনি। গত বছর বনদপ্তর থেকে পেয়েছেন সম্মাননা। নয়াপ্রজন্ম পত্রিকা তাকে সম্মান দিয়েছে।২৬ বছর ধরে অবকাশ নামে সাহিত্য পত্রিকা বার করছেন। লেখেন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ। নিজেকে জড়িয়ে রাখেন সমাজসেবা মূলক কাজ ও সৃজনশীল কাজে। এই পুরস্কার পেয়ে তিনি খুবই খুশি। এই পুরস্কার উৎসর্গ করতে চান তার প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের। তিনি জানান পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থ স্কুলের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করবেন।
পার্থ প্রদীপ সিংহ : লাভপুরের কালিকাপুরডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পার্থপ্রদীপ সিংহ। লাভপুর বিরাম মন্দির পল্লির বাসিন্দা পার্থবাবু ২০০৯ সালে ওই স্কুলে যোগ দেন। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার ওই স্কুলটি এক সময় পরিকাঠামো থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের গড় হাজিরা, পড়াশোনা সহ প্রায় প্রতিটি বিষয়েই পিছিয়ে পড়ার দলে ছিল। সেই স্কুলটিকেই কয়েক বছরের চেষ্টায় খোলনলচে বদলে দেন পার্থবাবু। স্কুলবাড়ি, শৌচাগার, ফুলবাগান, খেলার মাঠ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে শুরু করে কি নেই! স্কুলকে নিছক পড়াশোনার গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে কচিকাঁচাদের কাছে আর্কষণীয় করে তুলতে সংস্কৃতি মঞ্চ, আর্ট গ্যালারি, খেলনা–মুখোশ এমনকি সিনেমা এবং তথ্যচিত্র দেখার জন্য নিজস্ব প্রোজক্টরের ব্যবস্থা পর্যন্ত করে ফেলেছেন তিনি।
এতে স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরা বেড়েছে। ইতিমধ্যেই স্কুলের কাজে সামিল করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের। এক সময় ওই গ্রামে ৩/৪টি সরস্বতী পুজো হত। গত বছর থেকেই সমস্ত পুজো কমিটিকে একত্রিত করে স্কুলে একটাই পুজো চালু করেছেন। সেখান গান, নাচ, নাটকে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগ দেন বাবা-মায়েরাও। উদ্বৃত্ত টাকা লাগানো হয় স্কুলের উন্নয়নে। আর তারই ফলে সামনের সারিতে চলে আসে পিছিয়ে থাকা স্কুলটি। সেই সুবাদেই ২০১৬ সালে তাঁকে শিক্ষারত্ন পুরস্কার দেয় রাজ্য। শিক্ষারত্নের পুরস্কারে পাওয়া ২৫ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের ছাদে ইলেক্ট্রনিক্স প্যানেল বসিয়ে রাতের আকাশ দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইয়ে পড়া সৌরমণ্ডল গ্রহ-গ্রহান্তরের বিস্তার সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সম্যক ধারণা তৈরি করতে ওই ব্যবস্থা। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার বাবদ পাওয়া টাকাও স্কুলের উন্নয়নেই কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন পার্থবাবু। স্কুলচত্বরে তৈরি হয়েছে মানুষের ক্রম-বিবর্তনের স্ট্যাচু। সেগুলো রোদে-জলে নষ্ট হচ্ছে। জাতীয় পুরস্কারের টাকায় শেড তৈরি করে স্ট্যাচুগুলি সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
[uam_ad id=”3726″]